নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৫ বাংলাদেশির মধ্যে দু’জনের লাশ দাফনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ ও সিলেটের ফরিদ আহমেদের স্ত্রী হোসনে আরা আহমেদ নিউজিল্যান্ডেই সমাহিত হচ্ছেন। বাকি ৩ জনের লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ওই পরিবারগুলোর উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচনে বিলম্ব হওয়া এবং পরিবার প্রতি একজনকে নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তাদের লাশ দেশে পৌঁছাতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা। সেগুনবাগিচা এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নরসিংদীর বাসিন্দা জাকারিয়া ভূঁইয়ার স্ত্রী এরইমধ্যে স্বউদ্যোগে নিউজিল্যান্ডের পথে রওনা হয়ে গেছেন। তিনি এখন পথে আছেন। আজ তার ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছার কথা রয়েছে। যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে এটা নিশ্চিত যে, বেগম জাকারিয়া ক্রাইস্টচার্চে তার এক আত্মীয়ের বাসায় উঠছেন।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনিই স্বামীর লাশ গ্রহণ করবেন। নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক ও চাঁদপুরের মোজাম্মেল হকের পরিবারের প্রতিনিধি কে হচ্ছেন চূড়ান্ত হয়নি। বন্দর থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু ব্যাপারী জানিয়েছেন তারা চেষ্টা করছেন যত দ্রুত প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে। উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নিহত ফারুকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তার স্ত্রী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থায় তিনি ট্রাভেল করতে পারবেন কি-না? তা এখনও নিশ্চিত হয়। তবে আজ-কালের মধ্যে তারা তার স্ত্রী অথবা নিহতের ভাই যে কোনো একজনের নাম চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন বলে জানান। এদিকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীদুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মোজাম্মেলের পরিবার তার ভাই শাহাদাৎ হোসেন মিয়াজিকে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে লাশ গ্রহণের জন্য মানোনীত করেছে। শাহাদাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে তার কাগজপত্র জমা দিতে গেছেন। তার পরিবারের তরফে ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে। তিনি এটি ডিসি অফিসে ফরওয়ার্ড করেছেন। কেবিনেট ডিভিশনে এটি যাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তা নিউজিল্যান্ড সরকারের কাছে পাঠানো হবে। উল্লেখ্য, নিহত ব্যক্তিদের স্ত্রী, সন্তান, পিতা বা মাতা অথবা ঘনিষ্ঠ কাউকে (যার প্রতি নিহতের পরিবারের আস্থা আছে) নিউজিল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। পরিবার প্রতি একজনকে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া, লাশ দেশে পৌঁছানো এবং দাফন-কাফন সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় নিউজিল্যান্ড সরকারই বহন করবে। কোনো নিহতের পরিবার যদি ক্ষতিপূরণ চায় তা-ও দেয়ার কথা জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড সরকার। ওদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ক্যানবেরা মিশন এবং নিউজিল্যান্ডের (অনারারি) কনস্যুলেটের তথ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে লিপির অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। তার আরেকটি অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি চলছে। কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা লিপির চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করছেন খোদ নিউজিল্যন্ডের প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাকে দেখতে হাসপাতালেও গেছেন। পায়ে গুলিবিদ্ধ গাজীপুরের মুতাসসিম ও শেখ হাসান রুবেলের অবস্থা বিপদমুক্ত হলেও তারা এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে নৃশংস হামলায় ওই বাংলাদেশিসহ ৫০ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন।