× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গজলডোবার থাবা তিস্তায়

ষোলো আনা

পিয়াস সরকার (কাউনিয়া) রংপুর থেকে ফিরে
২২ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার

তিস্তা। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী এখন মরা গাঙ। আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে ফসলি জমি। মাঠকে মাঠ শুধু ধানের চাষ। নদীর বুকে ধানের ক্ষেত হলেও দিতে হচ্ছে মেশিনের সাহায্যে পানি। জমিতে সারি সারি ড্রেন। যা দিয়ে জমিতে দেয়া হয় পানি। শীতকালে আবাদ হয় রবি শষ্য।
নদীতে পানি নেই তাই ধীরে ধীরে নিচে নামছে পানির স্তর।

এখন চলছে বসন্ত কাল। এই মৌসুমেও চাষাবাদের জন্য পানির প্রয়োজন। আর নদীতে ধুলার রাজত্ব। আর বর্ষার সময় পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। এর কারণ একটাই তিস্তার মোহনায় দেয়া হয়েছে বাঁধ। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় এই বাঁধ। যার ফলে প্রায় দুই হাজার কিউসেক তিস্তার পানি চলে যাচ্ছে মহানন্দা নদীতে।

বাঁধের প্রভাবে কৃষিকাজে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সেই সঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে স্থানীয় প্রজাতির নানা মাছ। ফলে কোটি কোটি টাকার মাছ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। হারিয়ে যাচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। এমনটাই মন্তব্য করেন কৃষি গবেষক পাপিয়া শারমিন যুথি।

নদীর পাড়ের কৃষক ও বাসিন্দাদের দুঃখের অন্ত নেই। শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার। পানির অভাবে ইরি বোরোসহ নানান সবজি চাষে ব্যাপক বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। সেচের পানির মাধ্যমে চাষাবাদ করায় খরচ বাড়ছে। বাড়ছে কষ্ট। যেখানে নদীর তীরে জমিতে চাষাবাদ সেচ ছাড়াই হবার কথা। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা লতিফ সিদ্দিকী। তিনি নদীর বুকে প্রায় ২৭ বিঘা জমিতে করেছেন ধানের চাষ। তিনি বলে, প্রতি বিঘায় আমার সেচ বাবদ খরচ করতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

নদীর কূলজুড়ে শুধুই বালুর আস্তরণ। পানির জন্য হাহাকার। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে মেলে তার ভিন্ন চিত্র। গত দুবছরের ভয়ঙ্করী বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন নদী পাড়ের মানুষজন। বেওয়া বেগমের বাড়ি ছিল ঠিক নদী তীরেই। গত দু’বছরের বন্যাতেই হারিয়েছেন নিজের বসত-ভিটা। স্বামী হারা এই ৭০ বছরের বৃদ্ধা এক ছেলের সঙ্গে কোনো রকম জীবন যাপন করছেন। ২০১৭ সালের বন্যায় হারান বাড়ি। ফের পরের বছরের বন্যায় হারান ভিটাটুকুও। এখন রেললাইনের ধারে বেঁধেছেন ঘর। কোনো রকম মাথা গোজার ঠাঁই। তিনি আক্ষেপ করে জানান, নদীতে নাই পানি। হয় না ফসল। মাছ ধরে ছেলে আয় করবে সেও উপায়ও নাই। এখন সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন বর্ষাকালের কখন ফের কেড়ে নেবে কোনো রকমে সাজিয়ে তোলা জীবনটাকে।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই তিস্তা নদী। এই নদী ভারত থেকে নীলফামারী ডালিয়া পয়েন্ট হয়ে তিস্তা নদী ৭৫ কিলোমিটার। এই খরস্রোতা নদীর উজানে ভারত দিয়েছে মরণ কামড়।

একে নেই পানি তার ওপর ড্রেজিং না করায় এই নদী হারিয়েছে তার যৌবন। মৃতপ্রায় এই নদীতে পানি ফিরিয়ে আনা এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। তিস্তা নদীর আর্শীবাদ থেকে বঞ্চিত এই এলাকাবাসী যেমন হারাচ্ছেন কৃষি ও মৎস্যের সুবিধা সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় পানি প্রবাহ কমেছে অস্বাভিকভাবে। তাই নদী পাড়ে ফসলি জমির চাষ নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এখন যেহেতু মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে তাই ফসলের জন্য এটা সুসংবাদ। তিনি আরো বলেন, নদী ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সামনের শুষ্ক মৌসুমে আমার ড্রেজিংয়ে যেতে পারবো।

যদিও ড্রেজিং করাটাকে খুব একটা কার্যকর হবে বলে মনে করছেন না রিভাইন পিপলের পরিচালক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, ড্রেজিং অবশ্যই করতে হবে। তবে এই তিস্তা নদীতে প্রচুর পরিমাণে পলি পড়ে। আর বর্ষাকালে পানির স্রোত খুব একটা না হওয়ায় সরছে না পলি। ফলে ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি পানির প্রবাহ ধরে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, এভাবে চলতে থাকলে নদীর তলদেশ সমতলের তলদেশের রূপ ধারণ করবে। ফলে হারিয়ে যাবে একটি নদী। হারিয়ে যাবে একটি পরিচিতি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর