× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দিয়ার বাবা আর কোনো দিন বাস চালাবেন না

প্রথম পাতা

মরিয়ম চম্পা
২২ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার

দিয়া খানম মিমকে হয়তো আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। গত বছর ২৯শে জুলাই দুপুরে  বিমানবন্দর সড়কের রাস্তা পার হওয়ার সময় জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারায় দিয়া। তিনি শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় একই কলেজের মানবিক শাখার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব নিহত হন। এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হন। এ দুর্ঘটনার পর সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় নানা আশ্বাস। কেমন আছে দিয়ার পরিবার।
দিয়ার চলে যাওয়ার প্রায় ৮ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। এ বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় দিয়ার বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, প্রতিদিন আসরের নামাজ শেষে বড় মেয়ে রিয়াকে নিয়ে মেয়ের কবর জিয়ারত করতে যান দিয়ার মা। মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন মা রুকশানা। সারা ঘরময় দিয়ার স্মৃতি। সন্তানহারা মায়ের চোখ কেবলই মেয়েকে খুঁজে ফেরে। ঘুমাতে গেলেও মেয়ের ছবিকে বালিশের পাশে নিয়ে অঝোরে কাঁদেন দিয়ার মা। এদিকে ছোট বোন দিয়াকে কোনো ভাবেই ভুলতে পারছে না বড় বোন রিয়া। পিঠাপিঠি দুই বোন ছিল তারা। বোনের শোকে শারীরিকভাবে শুকিয়ে অনেকটা জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

সারাক্ষণ কি যেন ভাবতে থাকে। শুধুই ভাবতে থাকে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে খুব বেশি কথা বলে না। দু’ বোন একই খাটে একই বিছানায় পাশাপাশি ঘুমাতো। একজন আরেকজনকে ছাড়া খুব বেশি সময় থাকতে পারতো না। এখন ছোট ভাই রিয়াজুলকে নিয়ে ঘুমান রিয়া। ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলাম আরাফাত বোনের অভাবটা ঠিক ওভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। তবে ফজর নামাজ শেষে বাবার সঙ্গে ঠিকই বোনের কবর জিয়ারত করতে যায় ছোট ভাই রিয়াজুল। রিয়াজুল রমিজউদ্দিন স্কুলে পড়ে। মেয়েকে হারিয়ে ছেলেকে এখন আর হাতছাড়া করেন না দিয়ার বাবা। নিজে সঙ্গে করে স্কুলে দিয়ে আসেন। আবার স্কুল শেষে নিজেই নিয়ে আসেন। দিয়ার পড়ার টেবিল, বই-খাতা, কলম, ব্যাগ সবই পড়ে আছে। এগুলোকে স্মৃতি হিসেবে দেখে দিয়ার পরিবার। আর আমৃত্যু দেখে যাবেন।

দিয়ার বাবা পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে গাড়ির সঙ্গে যুক্ত। ২৭ বছর ধরে বাস চালিয়েছেন ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাই নবাবগঞ্জ রুটে। তবে বর্তমানে এই পেশার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। এ প্রসঙ্গে দিয়ার বাবা বলেন, মেয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আর গাড়ির স্টিয়ারিং-এ হাত দেই নি। ভবিষ্যতেও দেবো না। কারণ যে ঘাতক বাস আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সেই পেশায় আর নিজেকে জড়াতে চাই না। নতুন কোনো পেশায় নিজেকে জড়ানোর চেষ্টা করছি। সরকার এবং সাবেক নৌ-মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য পেয়েছিলাম। সেখান থেকে কিছু মুনাফা পাই। তিনি বলেন, প্রশাসনের কড়াকড়িতে মাঝখানে দুর্ঘটনার পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছিল। আবার নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে।

সম্প্রতি যে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে সেটাও বাসচালকের বে-খেয়াল, দক্ষতার অভাব এবং দুই বাসের রেষারেষির কারণেই হয়েছে বলে মনে করি। কয়েক টাকা বেশি ভাড়ার জন্য পারাপারি করে যাত্রী নিতে গিয়ে একটা প্রাণ শেষ হয়ে গেল। একটা মানুষের জীবন কেড়ে নেবে- এটা তো হতে পারে না। আমার মেয়েকে ঠিক যেভাবে হত্যা করা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরারকেও ঠিক একই ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সবে মাত্র ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে শুরু করেছে। চোখের সামনে জলজ্যান্ত ছেলেকে হারিয়ে আজকে তার বাবা-মা না জানি কতটা কষ্ট পাচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর