করিমগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে অনার্স পড়ুয়া স্ত্রী প্রজ্ঞা মোস্তফা (২৬) কে ছোরা দিয়ে জবাই করে হত্যার নৃশংস বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক স্বামী দেলোয়ার হোসেন মাহতাব (৩৮)। শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুল আফছার ১৬৪ ধারায় মাহতাবের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে মাহতাবকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আদালতে ১৬৪ ধারায় মাহতাবের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের উত্তর চান্দপুর গ্রামের নিজ বসতঘরে দেলোয়ার হোসেন মাহতাব স্ত্রী প্রজ্ঞা মোস্তফাকে ছোরা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে লাশ ঘরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালিয়ে ঘাতক মাহতাবকে আটক করে। মাহতাব উত্তর চাঁনপুর গ্রামের মৃত মো. ইমাম উদ্দিনের ছেলে।
অন্যদিকে নিহত প্রজ্ঞা মোস্তফা জেলার ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ সরকারি এ,বি,সি, পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহসান মোস্তফার মেয়ে।
প্রজ্ঞা কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে নিহত প্রজ্ঞার বাবা মো. আহসান মোস্তফা বাদী হয়ে ঘাতক স্বামী দেলোয়ার হোসেন মাহতাবকে একমাত্র আসামি করে করিমগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে বাদ জোহর শহরের ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বাগে জান্নাত কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বছর দেড়েক আগে দেলোয়ার হোসেন মাহতাবের সাথে কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অনার্সের ছাত্রী প্রজ্ঞা মোস্তফার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের মাস তিনেক পর মাহতাব কুয়েত চলে যায়। সেখানে দুই মাসের মতো অবস্থান করার পর খালি হাতে দেশে ফিরে এসে বেকার জীবনযাপন করতে থাকে। এর মধ্যে মাস তিনেক আগে প্রজ্ঞা একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। ব্যবসা শুরু করার কারণ উল্লেখ করে মাস খানেক আগে প্রজ্ঞাকে প্রধান শিক্ষক বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দেয়ার চাপ দেয়। প্রজ্ঞা এতে অপারগতা জানালে তার উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো শুরু করে মাহতাব। বৃহস্পতিবার সকালে আবারো যৌতুকের টাকা এনে দেয়ার জন্য প্রজ্ঞাকে চাপ দেয় মাহতাব। প্রজ্ঞা টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে এক পর্যায়ে মাহতাব ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের মধ্যে ফেলে গরু জবাইয়ের বড় ছোরা প্রজ্ঞার গলায় চালিয়ে দেয়। উপর্যুপরি ছোরার আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রজ্ঞা মারা গেলে লাশ ফেলে রেখে মাহতাব পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত প্রজ্ঞা মোস্তফার লাশ উদ্ধার করে এবং অভিযান চালিয়ে ঘাতক দেলোয়ার হোসেন মাহতাবকে আটক করে।