× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ব্যর্থতার দায়টা মেয়েদের না কি বাফুফের?

খেলা

স্পোর্টস রিপোর্টার, বিরাটনগর নেপাল থেকে
২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার

বয়সভিত্তিক ফুটবলে যে মেয়েরা একের পর এক সাফল্যে আলোকিত করেছে বাংলাদেশকে, সিনিয়র পর্যায়ের আসল লড়াইয়ে সেই মেয়েরাই চিনে গেছে ফুটবলের নিষ্ঠুর পৃথিবীকে। জাতীয় দল আর বয়সভিত্তিক দলের পার্থক্য অন্তত বিরাটনগর রঙ্গশালা থেকে বুঝে গেছে মারিয়া, মণিকারা। এর দায়টা অবশ্যই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। তাদের ভুল তরিকায় বয়সভিত্তিক ফুটবলে সাফল্য পাওয়া মেয়েরা সিনিয়র পর্যায়ে ব্যর্থ হচ্ছে বার বার। গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের এই মেয়েরাই ৭-১ গোলে হেরেছিল ভারতের কাছে। ভারতের সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই ফুটবলার বালা দেবী ও কমলা দেবী আসেননি এই সাফে। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল তারুণ্য নির্ভর এই ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানানোর। কিন্তু ভারতের চেয়ে বয়স, শারীরিক গড়ন, স্ট্যামিনা, স্কিল ও অভিজ্ঞতায় যে যোজন যোজন পিছিয়ে বাংলাদেশ, সেটা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে।
এই টুর্নামেন্ট খেলতে আসার আগে ভারত যেখানে ১২টি ও নেপাল সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, সেখানে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি মেয়েরা। প্রস্তুতির একমাত্র ভরসা ছিল এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের বাছাই পর্ব। ওই টুর্নামেন্ট খেলা দলের ১০ জন ছিলেন সিনিয়র দলে। বাকিরা বঞ্চিত হয়েছে প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে।
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল বলতে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা ৪২ ফুটবলার। এদের নিয়ে সারা বছর ক্যাম্প করেই বষয়ভিত্তিক ফুটবলে সাফল্য আসছে। তাইতো বাফুফের অন্যদিকে কোনো নজড়ই ছিল না। তাদের ধারণা ছিল অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬ ও ১৮ পর্যায়ে সাফল্য এনে দেয়া মেয়েরা সিনিয়র পর্যায়ে সফলতা এনে দেবে। তবে বাস্তবতা উপলব্ধি করেই এসব এদের দিয়ে এখনো বড় কিছুর প্রত্যাশা করেন নি বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। তিনি বার বার বলে আসছেন এটা মেয়েদের সঙ্গে মহিলাদের লড়াই। এখানে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক না। বৃটিশ এই ভদ্রলোকের মতে সিনিয়র পর্যায়ে এসব মেয়েদের সফলতা পেতে হলে আরো অনেক সময় লাগবে। সিনিয়র পর্যায়ে সফলতা পেতে হলে এই লেভেলে কমপক্ষে ৩০-৪০ জন ফুটবলার থাকতে হবে। যাদের সারা বছর পরিচর্যা করেই একটা শক্তিশালী জাতীয় দল তৈরি করা যাবে। ভারত নেপালের চেয়ে এই জায়গাটাতেই পিছিয়ে বাংলাদেশ। তাদের যেখানে শক্তিশালী জাতীয় দল গড়ার মতো যথেষ্ট ফুটবলার আছে, সেখানে একমাত্র সাবিনা খাতুন ছাড়া সিনিয়র পর্যায়ে খেলা কোনো ফুটবলার নেই বাংলাদেশের। যারা ছিল তারা ঝরে গেছে খেলা না থাকার কারণে। প্রায় অর্ধযুগ ধরে লীগ আয়োজনে ব্যর্থ বাফুফে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয় না পাঁচ বছর। দেশের মেয়েদের ফুটবলের টুর্নামেন্ট বলতে সরকারের অর্থায়নে অনুষ্ঠিত হওয়া বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল এবং বাফুফের আয়োজনে জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এ দুটি টুর্নামেন্ট থেকে যাদের পাওয়া যায় তাদের পরিচর্যা করেই বয়সভিত্তিক বিভিন্ন আন্তজার্তিক টুর্নামেন্টে অংশ নেয় বাংলাদেশ। এতে সফলতা আসছে। তবে বয়সভিত্তিক এসব সফলতার দিকে না তাকিয়ে মেয়েদের ফুটবলের অবকাঠামোর উন্নয়নের দিকে নজর দেয়ার তাগিদ দিলেন পল স্মলি। মেয়ের লীগ না হওয়াতে আর্থিক নিশ্চয়তা নেই ফুটবলারদের। যে কারণে ফুটবলে স্থায়ী হচ্ছেন না তারা। এর জলন্ত উদাহরণ গোলরক্ষক সাবিনা আক্তার, মাইনু মারমা, সুইনু প্রু মামরা ও কৃষ্ণা। গত সাফে দলেও ছিলেন তারা। কিন্তু গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পরে এদের কোনো খেলার জায়গা করে দিতে পারেনি বাফুফে। আর্থিক অনিশ্চয়তায় বাধ্য হয়ে ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুকছে মাইনু-সুইনুরা। এদের মতো উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। এই জায়গাটাতে উন্নতির জন্য দ্রুত লীগ আয়োজনের তাগিদ দিয়েছেন স্মলি। পাশাপাশি শক্তিশালী জাতীয় দল গঠনের পাইপ লাইন তৈরি করতে দেশব্যাপী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের কথাও বলেন তিনি। ২০০৯ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। ছয় বছর বিরতি দিয়ে সর্বশেষ আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৫ সালের নভেম্বরে। দেশের মেয়েদের লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র দু’বার। ২০১১ সালে প্রথম মেয়েদের ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা মোহামেডান। ২০১৩ সালে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত আসরে শিরোপা জেতে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। এই ব্যর্থতার থেকে যদি শিক্ষা না নেয় বাফুফে, তবে এখানেই আটকা থাকবে মেয়েদের ফুটবল।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর