ক্রাইস্টচার্চ হামলার জেরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ড সফর বাতিল করে দেশে ফিরে আসায় বেশ বিব্রত ও লজ্জিত কিউই ক্রিকেটাররা। টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকাটা তাদের কাছে অর্থহীন। বৃহস্পতিবার অকল্যান্ডে ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠানে এমনটাই জানান, কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার ওঠে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের হাতে। পুরস্কার হাতে পাওয়ার পর তিনি ক্রাইস্টচার্চ হামলা ও বাংলাদেশের সিরিজ বাতিল করে দেশে ফেরার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা (সন্ত্রাসী হামলা) আমরা এখনো মেনে নিতে পারছি না। তারা (বাংলাদেশ ক্রিকেট দল) দুর্ঘটনার খুব কাছে ছিল। সিরিজটা এভাবে শেষ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন ক্রিকেটীয় ব্যাপারগুলো তুচ্ছ হয়ে যায়। বিদায় বেলায় তাদের সঙ্গে আমরা হ্যান্ডশেকটাও করতে পারিনি।
তবে (খুদে বার্তায়) তাদের খোঁজ-খবর রেখেছি, তারা ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হতে চেয়েছি। আর মনে প্রাণে চেয়েছি তারা যেন নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে।’
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের নাম। সেই দেশেই ঘটলো ন্যক্কারজনক ঘটনাটি। গত ১৫ই মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান পাঁচ বাংলাদেশিসহ ৫০ জন। যার সাক্ষী হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও। ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। আর অল্পের জন্য রক্ষা পান তারা। ওই হামলার পর সিরিজ অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশ আবারো আসবে নিউজিল্যান্ড মন্ত্রীর আশানিউজিল্যান্ডের মাটিতে আগামী বছর একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চ হামলার পর এই সিরিজসহ ভবিষ্যতে অন্যান্য সিরিজ খেলতে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এখন। তবে নিউজিল্যান্ডের ক্রীড়ামন্ত্রী গ্র্যান্ট রবার্টসনের আশা, ভবিষ্যতে তার দেশে খেলতে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি সময় গড়ানোর সঙ্গে বাংলাদেশ দল এবং তাদের সমর্থকেরা নিউজিল্যান্ডে ফিরতে নিরাপদ বোধ করবে।’
রবার্টসন আশাবাদী, দুই দেশের সুসম্পর্কটা আগের মতোই থাকবে। আর এটি পুনর্গঠনে ক্রিকেট বড় ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বিসিবির কাছে পাঠানো মেইলে রবার্টসন লেখেন, ‘নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং আমাদের দু’দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক তা কোনো ব্যক্তির হিংসা আর ঘৃণায় ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না।’ অতীতে বেশ কয়েকবার নিউজিল্যান্ড সফর করেছে বাংলাদেশ। কখনোই নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়নি। এবারো তাই ছিল। তবে রবার্টসন ভবিষ্যতে বাংলাদেশি ক্রিকেটার ও ভক্ত-সমর্থকদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। কিউই ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি তারা এটাও মনে করবে, নিউজিল্যান্ডে তাদের দু’হাত বাড়িয়েই বরণ করে নেয়া হবে।’ সবশেষে ক্রাইস্টচার্চ হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি আরো একবার সমবেদনা প্রকাশ করে রবার্টসন বলেন, আপনাদের দুঃখ বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু আপনাদের দুঃখের প্রতিটি পর্যায়ে সঙ্গী হতে চাই আমরা। আমরা চিরদিন আপনাদের পাশে থাকবো।