× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ক্রাইস্টচার্চে সমাহিত সিলেটের হুসনে আরা

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চেই সমাহিত হলেন সিলেটের হুসনে আরা পারভীন। ওখানেই স্বামী ফরিদ উদ্দিন আহমদ ও মেয়ে শিফা বেগম চোখের জলে তাকে শেষ  বিদায় জানান। এদিকে- হুসনে আরা পারভীনের বিদায়ে কেঁদেছেন সিলেটের স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার সিলেটের মজসিদে মসজিদে তাদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। স্বজনরা জানিয়েছেন- নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার আল নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় হুসনে আরা পারভিন নিহত হন।

এরপর থেকে তার লাশ নিউজিল্যান্ডের একটি হাসপাতালে সরকারের তত্ত্বাবধানে ছিল। নিউজিল্যান্ড সরকার থেকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল শুক্রবার তাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এ কারণে শুক্রবারই তাদের দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
তারা জানান- শুক্রবার সকালে নিউজিল্যান্ড সরকার নিহত হুসনে আরা পারভীনের মরদেহ তার স্বামী ফরিদ উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করে।

এরপর তার লাশ নিয়ে আসা হয় ক্রাইস্টচার্চের বাসায়। সেখানে লাশ আনার পর কান্নার রোল পড়ে। নিহতের একমাত্র মেয়ে শিফা বেগম মায়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর তারা লাশের গোছল করান। এবং কাপন পরানোর পর লাশ জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে হোয়াটস অ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে দেশে থাকা স্বজনরাও হুসনে আরার লাশ শেষ বারের জন্য দেখেন। এদিকে- জানাজা শেষে নিউজিল্যান্ডের সময় ২টা এবং বাংলাদেশের ভোর চারটার দিকে হুসনে আরার লাশ ক্রাইস্টচার্চের মুসলিম কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। নিহত হুসনে আরার পিতার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা গ্রামে। তার স্বামীর বাড়ি বিশ্বনাথে। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হয় ফরিদ ও হুসনে আরার। বিয়ের কয়েক বছর তারা নিউজিল্যান্ড চলে যান।

তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের দিকে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন হুসনে আরা পারভীন। তখন তিনি স্বামীর বাড়ির পাশাপাশি পিতার বাড়িতেও বসবাস করেন। গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা বাড়িতে তার ভাই নাজিম উদ্দিন বসবাস করেন। ঘটনার দিন শুক্রবার আল নূর মসজিদে হামলার মাত্র ১৫ মিনিট আগে অসুস্থ স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে নিয়ে জুমার নামাজ পড়তে যান হুসনে আরা পারভীন। এ সময় মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হলে তিনি মসজিদে থাকা নারী ও শিশুদের নিয়ে মসজিদের বাইরে রাস্তার কাছে চলে আসেন। পরে স্বামীর সন্ধান করতে মসজিদে যান। কারণ- ফরিদ উদ্দিন আহমদ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর চেয়ারে করে চলাফেরা করেন।

স্বামীকে বাঁচাতে তিনি মসজিদে ঢোকার পরপরই গুলিতে নিহত হন। অবশ্য অসুস্থ ফরিদ উদ্দিন আহমদকে ওই দিন মুসল্লিরা মসজিদের ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। এ কারণে ফরিদ উদ্দিন প্রাণে রক্ষা পেলেও হুসনে আরা পারভীন নিহত হন। ফরিদ উদ্দিনের বাড়ি বিশ্বনাথের উত্তর মীরের চক গ্রামে।

ফরিদের বড় ভাই মইন উদ্দিন এ গ্রামে বসবাস করেন। মইন উদ্দিন জানিয়েছেন- তার ভাইয়ের সিদ্ধান্ত মতো হুসনে আরার লাশ নিউজিল্যান্ডে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে- গ্রামের মসজিদে হুসনে আরা পারভীনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। নিহত হুসনে আরার ভাগ্নে মাহফুজ চৌধুরী জানিয়েছেন- সকালে তার খালার মরদেহ পরিবারের কাছে দেয়া হয়। এরপর সেখানে জানাজার নামাজের পর দাফন করা হয়েছে। সিলেটে দোয়া : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া করা হয়েছে।

হযরত শাহজাল (র.) দরগাস্থ মসজিদে দোয়া মাহফিলে হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেন। এ সময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে। এদিকে- ওই হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ায় শুকরিয়া আদায় করে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ছিলেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবু জায়েদ রাহী ও সৈয়দ খালেদ আহমদ। এ দুই পেসারসহ দলের সবাই অক্ষত থাকায় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি পরিবার স্বস্তি প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের ইমাম হাফিজ ইসমাইল হোসেন। দোয়া মাহফিলে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল হক চৌধুরী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম রবিউল হোসেন, আইকিউএসি’র অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক চৌধুরী মো. মোকাম্মেল ওয়াহিদসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। দোয়া মাহফিল থেকে ওই হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর