রাজনগরের দুই বর্ষীয়ান ও রাজনৈতিক পুরোধাকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে চমক দেখিয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান খান (প্রাপ্ত ভোট-২৭৩৭৬টি)। মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির খান (প্রাপ্ত ভোট-১০৬০৩টি) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মিছবাহুদ্দোজাকে (প্রাপ্ত ভোট-২১৩১২টি) পরাজয়ে রাজনৈতিক সচেতন মহল বিস্মিত। আনারস প্রতীক নিয়ে মিছবাহুদ্দোজা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. আছকির খান দাঁড়াতেই পারেননি। যদিও তিনি ভোটের দিন দুপুরে শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে বল প্রয়োগ, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছিলেন। এদিকে নির্বাচনে বর্ষীয়ান এ দুই নেতার পরাজয় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এদিকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহজাহান খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে স্বাক্ষাতও করেছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসায় সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান খানের বিজয় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি এবং বিএনপি জামায়াতের যে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়েছেন, তারাই এ পরিবর্তনের মূল কারিগর। এছাড়াও মানুষের মাঝে নতুন কাউকে পাওয়ার আকঙ্ক্ষাও কাজ করেছে।
তাছাড়া হেভিওয়েট দুই প্রার্থী বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়াও একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন তারা। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুুল ওয়াহিদ ফজল বলেন, আসলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দিয়েছেন। মানুষ নতুনত্ব চেয়েছে। এটাই আমরা বুঝেছি। আমি ভোটের দিন দেখেছি মানুষ এটাই বলেছে এবার নতুন মানুষ চাই। ৯১ ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকার সময়ই উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুর্নীতির অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। বিষয়টি উপজেলার সাধারণ মানুষও জানে। আবার বিপক্ষে অবস্থা নেয়া কয়েকজন চেয়ারম্যান নির্বাচনে উনার পক্ষে মাঠে কাজ করেন। মানুষ এটা ভালো চোখে দেখেনি। এছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা, একলা চলো নীতি গ্রহণ করায়ও মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন বখ্ত বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের পরাজয় মূলত বিএনপি জামাতের ভোটারের কাছে। তারা চেয়েছিল নৌকার প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পরাজিত করতে। বিশেষ করে নির্বাচনে টাকার খেলা হয়েছে। মানুষকে টাকার বিনিময়ে প্রভাবিত করা হয়েছে। এছাড়া ভোটের দিন প্রশাসন নিরপেক্ষ ছিল না। জাল ভোট দেয়া হয়েছে। এমন প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহজাহান খান বলেন, আমি ছাত্রলীগ করেছি। আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষের ভোট পেয়েছি। টাকা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। ভোট পেতে হলে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হয়, তাদের কথা শুনতে হয়।