খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে মজুরি কমিশনসহ ৯ দফা দাবির আন্দোলন মেটাতে বিজেএমসি’র প্রস্তাবে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে পাটকল শ্রমিকরা। বিজেএমসি আগামী ২৮শে মার্চের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা ওই দিন পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। তবে, দাবি না মানলে ২৯শে মার্চ থেকে পাটকলে ধর্মঘট-অবরোধের নতুন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের বকুলতলা ও খালিশপুর জুট মিলের সামনে শ্রমিক সমাবেশে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট, রেলপথ-রাজপথ অবরোধসহ ৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক লীগ, সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদ।
পাটকল শ্রমিকরা জানায়, বিগত চার বছর ধরে দাবি পূরণের কথা বললেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া বকেয়া মজুরি, পিএফ’র টাকা প্রদান ও বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা যায়, খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মচারীদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আর্থিক সংকটে কাঁচা পাট কিনতে না পারায় পাটকলগুলোতে উৎপাদনে ধস নেমেছে। এসব কারণে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামে শ্রমিকরা।
তবে, সোমবার রাতে বিজেএমসি, বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে ১৯শে মার্চ থেকে পূর্ব ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট স্থগিত করে শ্রমিকরা। পাটকল শ্রমিক লীগের সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন বলেন, বিজেএমসি দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়ায় আপাতত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৭ই এপ্রিল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাকি দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে দাবি পূরণে আলোচনার প্রস্তাব ও স্বল্প সময়ের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের কথায় শ্রমিকদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, দাবি পূরণ নিয়ে শ্রমিকদের শঙ্কা কাটেনি। তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ রয়েছে। প্রয়োজনে দাবি আদায়ে শ্রমিকরা আবারও রাজপথে নামবে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, ২৮শে মার্চের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৯শে মার্চ খুলনাসহ জোনভিত্তিক জনসভা, ১লা এপ্রিল রাজপথে মিছিল, ২, ৩ ও ৪ঠা এপ্রিল পাটকলে টানা ৩ দিনের ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। শ্রমিকরা জানায়, বহির্বিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের পাটশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পাটকলে সময়মতো কাঁচা পাট ক্রয়, পুরানো মেশিনারিজে বিএমআরই, পাটপণ্যের বহুমুখী উৎপাদন ও শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করতে হবে।
এদিকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের পাটকল শ্রমিক নেতারা ঢাকায় বিজেএমসির বৈঠক শেষে খুলনায় শ্রমিক সমাবেশে তাদের আন্দোলন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্রিসেন্ট জুট মিলের বকুলতলা ও খালিশপুর জুট মিলের সামনে ঢাকা ফেরত পাটকল শ্রমিক লীগের নেতারা এ শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে বিস্তারিত শ্রমিকদের অবহিত করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা মো. মুরাদ হোসেন।
এ সময় শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, দ্বীন ইসলাম, পান্নু মিয়া, আবু জাফর আলী, মো. ইউনুস হাওলাদার, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ওমর ফারুক, আবু হানিফ, মিজানুর রহমান, মোল্যা আব্দুর রশিদ। খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. ইব্রাহিম, শওকত মোড়ল, আব্দুল মজিদ বকুল, আশরাফ আলী, আব্দুর রহিম হাওলাদার, কামাল হোসেন সেন্টু, গাজী মোশারেফ হোসেন, জাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান, পিলটন মোল্যা, সাহিদুল ইসলাম।