শিক্ষকতা শুরু করেছেন ২০ বছর আগে। বাড়ির পাশেই মাদরাসা। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টা পার করে দিয়েছেন এই মাদরাসাতেই। এই পেশা দিয়েছে তাকে সম্মান, দিয়েছে মর্যাদা। কিন্তু পূরণ করেনি অর্থের চাহিদা। ঠাকুরগাঁও জেলার চোসপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান। শেষ বয়সে চান স্বীকৃতি। চান এমপিও ভুক্তি।
মজিবর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি। হয় এমপিও নিয়ে ঘরে ফিরবো, না হয় এখানেই অনশনে জীবন শেষ করে দিব। তিনি আরো বলেন, আমার ৫ সন্তান নিয়ে সংসার। শিক্ষকতার পেশায় নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু পায়নি মর্যাদা। কৃষিকাজ করে চলছে সংসার। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। বড় ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার ছোট মেয়েটা দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তাদের শিক্ষার ভার আমার কাছে দুরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরো ৩ সন্তানকে কীভাবে লেখাপড়া শেখাবো এই চিন্তা মাথায় আসলে চোখে অন্ধকার দেখি। প্রতি বছর ঈদে নতুন কাপড়ও দিতে পারি না। ছোট মেয়েটার মুখের দিকে তাকাইতে পারি না। এই কথা বলেই চোখের মাঝে দেখা দেয় এক চিলতে অশ্রু। গতকাল শনিবারও কর্মসূচিতে ছিলেন শিক্ষকরা।
প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছেন। এরই মাঝে দেখা যায় এক শিশুকে। তার নাম মুনতাহা জিম। বয়স মাত্র ৬। হাতে প্ল্যাকার্ড। লেখা- ‘ প্রধানমন্ত্রী আমার মায়ের বেতন চাই। আপনার সাক্ষাৎ চাই।’ এই শিশুটিকে নিয়ে মা মোমেনা খাতুন এসেছেন পাংশা রাজবাড়ী থেকে। তিনি সেনগ্রামপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। চাকরি করছেন ১৭ বছর যাবৎ। এই দীর্ঘ সময়েও মেলেনি সম্মানি। তিনি বলেন, মৃত্যু হলে হবে। আমার লাশ যাবে এখান থেকে। তবু আমাদের আন্দোলন থামবে না। আমি এখান থেকে যাবো না। গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার উদখালী মডেল কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক।
চাকরি করেন ১৬ বছর যাবৎ। তিনি বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা। এলাকায় সবাই সম্মান করে। কিন্তু পেটে ভাত না থাকলে এই সম্মানের মূল্যটাই বা কী? এখন আমার সংসার চলছে কোনো রকম। এ যেন না চলার মতোই। একই কলেজে ১৯ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তার সম্বল মুদি দোকান। প্রায়শই শুনতে হয়, যে চাকরিতে বেতন নাই এই চাকরি করে লাভ কী? তিনি আরো বলেন, এমপিওভুক্ত হওয়ার মতো সকল শর্ত আছে আমাদের। তারপরেও কেন আমরা বঞ্চিত? আমাদের কলেজে ৪০৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে? তারপরেও কেন এই বৈষম্য? শিক্ষকদের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছেন বেশ কিছু নারী শিক্ষকও। রেশমা আক্তার এসেছেন কুমিল্লা থেকে। তিনি বলেন, বাড়িতে দুই সন্তানকে রেখে এসেছি। তারা মা ছাড়া নিশ্চই ভালো নাই। আমি চাই আমার সন্তানের এই কষ্টটার মূল্য দিক সরকার। মেনে নিক আমাদের দাবি।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা চান সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস। এই নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। গত বছরেও তারা আন্দোলনে সড়কে নেমেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী একান্ত সচিব দাবি মেনে নেবার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না দেখায় ৮ মাসের মাথায় ফের সড়কে নেমে আসেন তারা। এবার তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কারও ওপর আস্থা নেই। এবার তারা সাক্ষাৎ চান প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলেই তবেই সড়ক ছাড়বেন।