রাজধানীর গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ এলাকায় পৃথক দু’টি গুলির ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। দু’টি ঘটনাই টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে গুলিস্তানের ঘটনায় এক ছিনতাইকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে তাকে আটক দেখিয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে গুলিস্তানে দুর্বৃত্তদের গুলির ঘটনায় সুজাউদ্দিন তালুকদার (৩৭) নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাভানার এক নির্বাহী কর্মকর্তা আহত হন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুলিস্তানের হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্ব পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সুজাউদ্দিন তালুকদার। একই সময় ওই এলাকায় জাহিদুল ইসলাম সোহাগ (৪০) নামের আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন।
তার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। দু’জনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তাদের দু’জনের দাবি, তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, সুজাউদ্দিনের কাছ থেকে মূল্যবান কাগজপত্র ও ব্যাংকের চেক ছিনতাই করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সোহাগ। এর আগে তিনি সুজাউদ্দিনকে গুলি করেন। আহত দু’জনের চিকিৎসা চলাকালে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে যান পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক। গুলিবিদ্ধ দু’জনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কথা বলার একপর্যায়ে জাহিদুল ইসলাম সোহাগের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন ওসি। মাহমুদুল হক বলেন, সুজাউদ্দিন তালুকদারের ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত জাহিদুল ইসলাম সোহাগ। সুজাউদ্দিনের ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে। সুজাউদ্দিন অফিসের কাজে মহানগর নাট্যমঞ্চের পূর্বপাশের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে নবাবপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিকে থেকে দু’জন মোটরসাইকেল আরোহী তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে সুঠামদেহী সোহাগ সুজাউদ্দিনের হাতে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ধরে টান দেন। তবে সুজাউদ্দিন তাতে বাধা দেন। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। সোহাগ এ সময় সুজাউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারেন। ব্যাগ টান দিয়ে নিতে না পেরে তার ডানপাশ থেকে পিস্তল বের করে সুজাউদ্দিনের বাম পায়ে গুলি করেন।
এ সময় তার হাতে ব্যাগ চলে আসে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সোহাগের নিজের বাম পায়ের হাঁটুর কাছে গুলি লাগে। ওই সময় আরেক ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল ইউ টার্ন নিয়ে তাদের দু’জনের মাঝখানে দাঁড়ায়। সে সময় ছিনতাই করা ব্যাগটি অন্য ছিনতাইকারীকে সোহাগ দিয়ে দেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেই ব্যাগ নিয়ে ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে পুলিশ গিয়ে সোহাগকে শনাক্ত করে। তাকে আটক দেখিয়ে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চার-পাঁচজন যুবক ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এদের একজন মনির হোসেন জানান, বেলা একটার দিকে হানিফ ফ্লাইওভারের পাশের ফুটপাথে চার-পাঁচজন লোক একসঙ্গে সুজাউদ্দিনকে মারধর শুরু করে। তাদের মধ্যে দু’জন মোটরসাইকেলে চড়ে আসেন। প্রায় দশ-পনেরো মিনিট ধরে ওই পথচারীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।
মোটরসাইকেল আরোহী দু’জনেরই হেলমেট পরা ছিল। এদের মধ্যে একজন সুজাউদ্দিনকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ লোকটির হাত ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারী অন্যদের নিয়ে দ্রুত চলে যায়। পল্টন থানার ওসি মাহমুদ বলেন, সোহাগকে আসামি করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর সায়েদাবাদে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মো. ওবায়দুল্লাহ (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। শুক্রবার মধ্যরাতে ঘটনা ঘটে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওবায়দুল্লাহ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পুলিশ ইন্সপেক্টর আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাই। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ওবায়দুল্লাহর শরীরে একটি গুলি লেগেছে। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। আহতের ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ওবায়দুল্লাহ শুক্রবার রাতে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে সায়েদাবাদ ব্রিজের কাছে একটি মোটরসাইকেলে দু’জন সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে সংবাদ পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কারা গুলি করেছে তা এখনো জানা যায়নি।