× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গ্যারেজে গ্যারেজে সুপ্রভাত

এক্সক্লুসিভ

মারুফ কিবরিয়া
২৫ মার্চ ২০১৯, সোমবার

রাজধানীতে বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রভাত কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের পর নগরীর কোথাও কোনো রুটে বাসটি চলছে না। এ ঘটনার পর কোম্পানিটির বাসগুলো সড়কে দেখা না গেলেও  রয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্কশপের গ্যারেজে। সারিবদ্ধভাবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গ্যারেজে রাখা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মাতুয়াইল ও ডেমরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। সরজমিন দেখা যায়, মাতুয়াইলে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের আশেপাশে বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপের গ্যারেজে সারি সারি সুপ্রভাত বাস। প্রায় সবক’টি বাসই নতুন। মেরামতের জন্য রাখার মতো নয়। জানা যায়, শহরে সুপ্রভাত বাস নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে গত কয়েকদিন থেকে এখানেই রাখা আছে।


কিছুদিনের মধ্যে নিষিদ্ধ বাসগুলো নতুন নামে আবারো সড়কে তোলার প্রস্তুতির জন্যই এসব গ্যারেজে নেয়া হয়। এরই মধ্যে শহরের বাইরে বেশ কয়েকটি স্থানে নাম ও রং বদলানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ী সড়কের একটি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিনটি সুপ্রভাত কোম্পানির বাস। এগুলোর মধ্যে দুটি আকাশ সুপ্রভাত নামের রয়েছে। একই কোম্পানির আওতাধীন এই বাসগুলো গত দু’দিন আগে এনে রেখে গেছে বলে জানিয়েছে ওয়ার্কশপের এক কর্মচারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মচারী বলেন, দুইদিন আগে চালক রেখে গেছেন। মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। যতদূর জানি, বাসের রং বদলাইবো। আর সুপ্রভাত থাকবো না। আমরা তো কর্মচারী। সব জানি না। পাশের আরেকটি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও কয়েকটি সুপ্রভাত বাস। এই ওয়ার্কশপের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তবে ওয়ার্কশপের বাইরের একটি চায়ের দোকানে সেখানকারই এক কর্মচারীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, বাসগুলোর রং বদলানো হবে। নামও পরিবর্তন করা হবে। তিনি আরো জানান, তিন দিন আগে বাসগুলো তার ওয়ার্কশপে দিয়ে গেছে। শুধুই একটি ওয়ার্কশপে নয়। মাতুয়াইল থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পুরো সড়কটির পাশে যতগুলো ওয়ার্কশপ আছে প্রতিটিতেই কয়েকটি করে সুপ্রভাত বাস দেখা গেছে। ওয়ার্কশপটির ওই কর্মচারী বলেন, সব ওয়ার্কশপেই কিছু না কিছু পাবেন।

এই রোডে সব মিলে একশ’টার বেশি সুপ্রভাত বাস আছে। এক জায়গায় তো সব রাখা যায় না। তাই কিছু কিছু করে রাখছে। এদিকে স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় ওয়ার্কশপে এক দুইটি করে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় মানুষের আনাগোনা কমে গেলে নাম ও রং বদলানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। মাতুয়াইলের কাঠের পুল এলাকার ফারুক হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, দিনের বেলায় এমনিই ফেলে রাখা হয় সুপ্রভাত বাস। সন্ধ্যার পর থেকে কাজ করে রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় অন্য জায়গায়। দিনে কাজ করলে তো সবাই দেখে ফেলে। তাই রাতেই কাজ সেরে রাখা হয়। ফয়সাল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, গত পরশু তিনটা বাস এখানে আনা হয়েছিলো। এখন গ্যারেজে এনে বিকালে রাখছে। ভোরে উঠে দেখি নাই। তার মানে বুঝে নেন, রাতেই কাজ শেষ করে নিয়ে গেছে। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক কর্মচারী বলেন, সুপ্রভাত বাসের ঘটনার পর থেকে এক এক করে এই রোডের ওয়ার্কশপগুলোতে অনেক বাস আসছে। আবার নিয়েও গেছে। দিনের বেলায় খুব বেশি দেখা যায় না। সন্ধ্যার দিকে গ্যারেজে নিয়ে রাখা হয়। সকাল হওয়ার আগেই নিয়ে যায়। শুধু মাতুয়াইলেই নয়। সুপ্রভাত বাসের সারি নজরে পড়েছে রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশের একটি সড়কে। সেখানেও প্রায় বিশটির মতো ওই কোম্পানির বাস সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। 

গত ১৯শে মার্চ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ ফটকের সড়কে বেপরোয়া গতির সুপ্রভাত বাসচাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব  প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তার সহপাঠীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সড়কটি অবরোধ করেন। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে সর্বত্র। একই সঙ্গে গতবছর জাবালে নূর বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শুরু হওয়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন আবারো শুরু হয়। টানা দুইদিনেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার আশ্বাসেও তারা আন্দোলন থেকে পিছপা হননি।

তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজধানীতে সুপ্রভাত বাস চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এর একদিনের মধ্যেই খবর প্রকাশ হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত সুপ্রভাত বাস সম্রাট নামে সড়কে চলাফেরা করার জন্য নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যাতেই গাজীপুরা এলাকায় এই সম্রাট নামকরণের কাজ দেখতে পান স্থানীয়রা। তাদের মাধ্যমেই সংবাদ মাধ্যমে খবরটি ফলাও করে প্রকাশ হয়। এ বিষয়ে সেদিন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সুপ্রভাত বাস সার্ভিসের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। সুপ্রভাত পরিবহনের কোনো বাস গাজীপুরে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে নাম পরিবর্তন করে মহাসড়কে চলাচল করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর