× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সংসদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ

প্রথম পাতা

কাজী সোহাগ
২৫ মার্চ ২০১৯, সোমবার

সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস-এর নির্দেশনার পর এ উদ্যোগ নেয়া হয়। সংসদে কর্মরত আছেন প্রায় ১২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তবে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী মানবজমিনকে জানান, সরকারি চাকরি করার পরও যেভাবে তদন্ত করা হচ্ছে তা অনভিপ্রেত। অনেক কঠিন শর্ত দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা চিঠিটি ইস্যু করেছেন সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস। সরকারি পদাধিকার বলে এটা তিনি পারেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তার মতো সরকারি কর্মকর্তার কাছে আমরা কেন নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য দেবো। হয়তো স্পিকারকে ভুল বুঝিয়ে তিনি এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এদিকে বিষয়টি নিয়ে গতকাল সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খানের সঙ্গে দেখা করেছেন বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সেখানে তারা এ ধরনের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি তদন্তের জন্য তৈরি যে ফরম দেয়া হয়েছে তাতে শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছেন। সচিব তাদের বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, নিরাপত্তার নামে আমাদের ওপর গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আগে মূলত পুলিশি তদন্ত করা হতো। এবার করা হচ্ছে গোয়েদা তদন্ত। তিনি বলেন, সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস নিশ্চয় দুর্নীতি দমন কমিশন নয় যে আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাংকের তথ্য ও অন্যান্য বিষয় জানতে চাইবে। নিরাপত্তার সঙ্গে এসবের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে বলে আমরা মনে করি না।

গত ২১শে মার্চ সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস কমডোর মোস্তাক আহম্মেদ স্বাক্ষরিত চিঠিটি ইস্যু করা হয়। এতে ৩৬ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ১১ ধরনের তথ্য, পিতা-মাতা-সংক্রান্ত ১২ ধরনের তথ্য, ভাই-বোন-সংক্রান্ত চার ধরনের তথ্য, বিয়ে-সংক্রান্ত পাঁচ ধরনের তথ্য এবং সন্তান-সংক্রান্ত চার ধরনের তথ্য। আগামী ১৪ই এপ্রিলের মধ্যে এসব তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার আগে ও পদোন্নতির সময় এ ধরনের তদন্ত হয়। কেউ সন্দেহজনক কাজ করলেও তদন্ত হতে পারে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছেন তাদের বিষয়েও সন্দেহজনক কিছু হলে তদন্ত হতে পারে। কিন্তু সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস অযথা তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছেন প্রায় ২৩০ জন। এর মধ্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্য আছেন ১১৫ জন। আর সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী আছেন ১১৫ জনের মতো।

সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস তাদের প্রধান। সাধারণত নৌবাহিনীর কমডোর পর্যায়ের কর্মকর্তা ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
চিঠিতে যা আছে সার্জেন্ট এ্যাট আর্মসের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে-জাতীয় সংসদের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং অত্র সচিবালয় এলাকায় অবস্থিত সহায়তাকারী অন্যান্য সংস্থায় (গণপূর্ত বিভাগ, ব্যাংক, বিটিসিএল, মেডিকেল সেন্টার, পোস্ট অফিস, ক্যাফেটেরিয়া ও মেম্বারস ক্লাব) কর্মরত সকল স্থায়ী/অস্থায়ী/সাংবাৎসরিক/ সংযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিরাপত্তা গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক নিরাপত্তা ছাড়পত্র আনয়ন করা প্রয়োজন।

এই প্রেক্ষিতে উল্লেখিত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র আনয়নের লক্ষ্যে সংযুক্ত ছক মোতাবেক তথ্যাদি পূরণ করে ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করে শাখা ভিত্তিক নামীয় তালিকাসহ প্রত্যেকের ২ সেট তথ্যাদি স্ব স্ব শাখা প্রধানের অগ্রায়নপত্রসহ আগামী ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে ডেপুটি সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস (অপারেশন্স) অফিসে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লেখ্য যে, সংযুক্ত ফরমসমূহ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নামীয় তালিকার ক্রমানুসারে সন্নিবেশন করে প্রত্যেক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ২ সেট করে তথ্যাদি প্রেরণ করতে হবে। বিষয়টি সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিশ্চিতকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানগণকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। সংসদের নিরাপত্তা বিষয়ক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মকর্তা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নানা বিভ্রান্তকর তথ্য দেন। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব জাহিরের জন্য তিলকে তাল করে দেখান। একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে নানা ধরনের কাজ করা হচ্ছে। এসব তদন্ত তারই অংশ।

এ প্রসঙ্গে সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস কমডোর মোস্তাক আহম্মেদকে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে হুইপ ইকবালুর রহিম সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস এর তৎপরতাকে ইতিবাচক বলে মনে করেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই এমন টাকা জমা রয়েছে। সংসদ সচিবালয় হচ্ছে হাই সিকিউরিটির জায়গা। এখানে যারা কাজ করছেন তাদের কেউ জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন। কারও অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে অবৈধ টাকা আসছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি। সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস যা কিছু করছে আমার মনে হয় নিরাপত্তার স্বার্থেই করছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর