মাত্র তিন মাস আগে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে খুলনা-৫ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। আর তিন মাস পরেই তিনি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বৈঠক করে নৌকার বিপক্ষে কাজ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, হুমকি, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে সরাসরি ভোট চাইছেন এমপির ছেলে বিশ্বজিৎ চন্দ্র। প্রচার-প্রচারণায় গিয়ে এমপি পুত্র বলছেন ‘ঘোড়ার চাটিতে নৌকা ডুবে যাবে’। এমপির লোকজন সাধারণ ভোটারদের কাছে গিয়ে বলছেন ‘এই নৌকা সেই নৌকা নয়’। গতকাল দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ার।
তিনি বলেন, ১৪ই মার্চ নৌকা প্রতীক পেয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করি। কিন্তু ১৮ই মার্চ সংসদ সদস্য যশোর আইটি পার্কে আসেন। তিনি সেদিন আইটি পার্কের রেস্ট হাউজে ডুমুরিয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে নিয়ে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এবার নৌকা ঠেকাতে হবে। তখন সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বুলু প্রতিবাদ করলে এমপি তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আমার কথায় না চললে ডুমুরিয়ায় রাজনীতি করতে পারবা না’। তার এই হুমকি প্রদানের পর ওই দিন সন্ধ্যায় চুকনগরে নৌকা প্রতীকের দুই কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। একই রাতে শাহপুরে তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এ ছাড়া এমপির অনুসারীরা প্রত্যেকটি ইউনিয়নে গিয়ে বলছে ‘এই নৌকা সেই নৌকা নয়’।
মোস্তফা সরোয়ার প্রশ্ন রেখে বলেন, এখানে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা ভোট চাইছেন, আমিও ভোট চাইছি। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই নির্বাচিত হবেন। কিন্তু সেই পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শোভনা ইউপি চেয়ারম্যান সুরজিত বৈদ্য সামাজিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি চালাচ্ছে। ফলে ডুমুরিয়া অশান্ত হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তার জন্য এমপি সাহেব দায়ী থাকবেন।
সম্মেলনে আরো বলা হয়, চরমপন্থিরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হিন্দু এলাকায় গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। বলা হচ্ছে- নৌকার এজেন্ট হলে তাদের মেরে ফেলা হবে। সম্প্রতি নৌকার সমর্থক নারায়ণ মল্লিককে মারধর করা হয়েছে, খর্নিয়ার পরিতোষ মণ্ডলকে চলা কাঠ দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আমার নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এমপির পুত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ চন্দ্র প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী এজাজ আহমেদের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইছেন। এমপি পুত্র বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় বলছেন ‘ঘোড়ার চাটিতে নৌকা ডুবে যাবে’। এমপির মদদে চরমপন্থি, শাহিন, বোমা হাবিব, কিলার বাবুর মতো সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচনে যেসব প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সকলেই এমপির লোক। কাজেই তাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি চাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই পরিবেশ সৃষ্টি হলে জয়-পরাজয় যা-ই হোক আমি মেনে নেব।
এদিকে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যার হাতে নৌকা দিয়েছেন তার হাতে নৌকা নিরাপদ নয়। এ কারণে আমি তাকে সমর্থন দিতে পারিনি। যশোরের বৈঠকের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা এসেছিল, মতবিনিময় হয়েছে। সেখানে মোস্তফা সরোয়ারের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে এসেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ছেলের ভোট চাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ছেলের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে। সে কাকে পছন্দ করবে এটা তার ব্যাপার।