× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নুসরাতের মতো নির্যাতিত অনেক নারী মুখ বন্ধ করে রাখেন

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) এপ্রিল ১৮, ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

সামাজিক ও পরিবারে লজ্জার ভয়ে বাংলাদেশে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের কথা অনেক বালিকা ও যুবতী গোপন রাখেন। এক্ষেত্রে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি ব্যতিক্রম। তিনি সব কিছু পিছনে ফেলে কথা বলেছিলেন। যেদিন তাকে হয়রানি করা হয় সেদিনই তিনি থানায় গিয়েছিলেন তাদের সহায়তা পেতে। এর পরেই মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই রক্ষণশীল দেশটিতে যৌন হয়রানির শিকার কতটা বিপন্ন অবস্থায় এ ঘটনা সেদিকে মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। অনলাইন বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।


হয়রান হওয়ার পর নুসরাত থানায় গিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন। এখানে তার মানসিক ক্ষত কমিয়ে আনার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ পাওয়ার কথা ছিল। তার পরিবর্তে তিনি যখন তার ওপর চালানো নারকীয়তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার মোবাইল ফোনে তাকে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। ওই ভিডিওতে নুসরাতকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তিনি হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছিলেন। এতে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, এ অভিযোগ তেমন বড়ো কিছু নয়। একই সঙ্গে তিনি নুসরাতকে তার মুখ থেকে হাত সরাতে বলেন। কিন্তু পরে ওই ভিডিও স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশ পায়।

নুসরাতের এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। এ বিষয়ে বিবিসি লিখেছে, নুসরাত বাংলাদেশের একটি ছোট্ট শহর ফেনীর রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। তিনি পড়াশোনা করতেন মাদ্রাসায়। তার অবস্থানে থাকা একটি মেয়ের পক্ষে যৌন হয়রানির রিপোর্ট করার ফলে তিনিই পরিণতির শিকারে পরিণত হতে পারতেন। যৌন নির্যাতনের শিকাররা মাঝে মাঝেই তাদের সমাজে হয়রানির শিকার হন। ব্যক্তিজীবনেও। আবার অনলাইনেও নানা রকম কথা হয়। আবার কখনো কখনো তাদের ওপর সহিংস হামলা হয়। এসবই প্রয়োগ হয়েছিল নুসরাতের ওপর।

তিনি পুলিশে যাওয়ার পর ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপরই নুসরাতের দুর্ভাগ্য শুরু হয়। এ ঘটনায় ওই অধ্যক্ষকে মুক্তির দাবিতে কিছু মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করে। দু’জন ছাত্র ওই বিক্ষোভের আয়োজন করে। এতে যোগ দেন স্থানীয় কিছু রাজনীতিক। ঘটনার জন্য নুসরাতকে দায়ী করতে থাকে পুলিশ। তার পরিবার জানায়, এ সময় নুসরাতের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

যৌন নির্যাতনের ১১ দিন পরে ৬ই এপ্রিল নুসরাত ফাইনাল পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যান।
নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, বোনকে মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং তাকে মাদ্রাসার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমাকে থামিয়ে দেয়া হয়। ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। যদি আমাকে থামাতে না হতো তাহলে বোনের এই পরিণতি হতো না।

নুসরাতের বক্তব্য অনুযায়ী, একজন ছাত্রী তাকে মাদ্রাসার ছাড়ে নিয়ে যান। তিনি জানান, তার এক বান্ধবীকে প্রহার করা হয়েছে। তাকে দেখতে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়া হয় ছাদে। তিনি ছাড়ে পৌঁছার পর চার থেকে ৫ জন বোরকা পরা মানুষ সেখানে তাকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে বলে। এতে অস্বীকৃতি জানান  নুসরাত। ফলে তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, খুনীরা দেখাতে চেয়েছিল যে এটা একটা আত্মহত্যা। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেছে। তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর নুসরাতকে উদ্ধার করা হয়। তিনি তারা যাওয়ার আগে বলে যান সব কথা।

নুসরাতকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা দেখেন তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। এর চিকিৎসা তাদের কাছে নেই। তাই তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাপতালে। অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে নুসরাতের মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক ঘিরে ধরে। তিনি মনে করেন আর বেঁচে থাকবেন না। তাই তিনি মারা যাওয়অর আগে ভাইয়ের মোবাইলে তার বক্তব্য রেকর্ড করে যান। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক আমাকে স্পর্শ করেছেন। আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো। এ ঘটনায় মাদ্রাসার কিছু ছাত্রকে তিনি চিহ্নিত করে যান।
নুসরাতের এ ঘটনা বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রাধান্য বিস্তার করে। তিনি মারা যান ১০ই এপ্রিল। তার দাফন অনুষ্ঠানে ফেনিতে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর