কিশোরগঞ্জে চাঞ্চল্যকর কিশোর সাগর হত্যায় শহীদ (২২), সজল (২০), আশরাফুল ইসলাম বাবু (২৫), রাকিব (২১) ও সাফি (১৮) নামে পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ ২নং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান। গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ যুবকের মধ্যে সাফি মামলার মূল অভিযুক্ত শহরের হারুয়া এলাকার আবু হানিফ ওরফে হাছু ডাকাতের ছেলে, শহীদ একই এলাকার আবু তাহেরের ছেলে, আশরাফুল ইসলাম বাবু একই এলাকার সোহরাব মিয়ার ছেলে, রাকিব একই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে এবং সজল একই এলাকার হরমুজ আলীর ছেলে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় নিহত মো. সাগর মিয়ার মা আসমা আক্তার বাদী হয়ে শহরের হারুয়া এলাকার আবু হানিফ ওরফে হাছু ডাকাতকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ যুবকের মধ্যে সাফি, শহীদ ও আশরাফুল ইসলাম বাবু মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, শহরের হারুয়া কাতিয়ারচর এলাকায় এলাকায় অবৈধভাবে বসানো একটি বৈশাখী মেলায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে আবু হানিফ ওরফে হাছু ডাকাতের সঙ্গে হারুয়া সওদাগর পাড়ার লাদেন মিয়ার ঝগড়া হয়। এ সময় লাদেন মিয়াকে হাছু ডাকাতের লোকজন মারপিট করে। এর পাল্টা হিসেবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাদেনের লোকজন হাছু ডাকাতের লোকজনকে এলাকায় ধাওয়া দেয়। এ ঘটনার জের ধরে রাত ৮টার দিকে লাদেনের প্রতিবেশী হারুয়া সওদাগর পাড়ার বকুল মিয়ার ছেলে সাগর (১২) কে শহরের গাইটাল এলাকার পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাস্তায় সন্ত্রাসীরা দা. চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। এলাকার লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় সাগরকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সাগর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাতেই বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এলাকাবাসী। রাত ১২টার দিকে উত্তেজিত এলাকাবাসী হারুয়া চৌরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। এসময় পুলিশের সাথে হামলাকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে লাঠিচার্জসহ ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহত সাগরের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচার দাবিতে লাশ নিয়ে বিশাল মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে দুপুর একটার দিকে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে শহরের হারুয়া এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী কয়েকশ’ নারী-পুরুষ নিহতের লাশ নিয়ে মিছিল বের করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক জানান, পুলিশ মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামি সাফি, শহীদ ও আশরাফুল ইসলাম বাবু এবং সন্দেহভাজন সজল ও রাকিবকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।