× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘আমার সবকিছু কেড়ে নেয়ার পর মেয়ের দিকে কু-দৃষ্টি পড়ে যুবলীগ নেতা উজ্জ্বলের’

শেষের পাতা

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার

স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই মোবাইলে বিরক্ত করতো যুবলীগ নেতা আলী হোসেন উজ্জ্বল। সরলতার সুযোগ নিয়ে একদিন ওর বাড়িতে ডেকে নেয় আমাকে। তখন বাড়িতে উজ্জ্বল ছাড়া কোনো মানুষ ছিল না। এরপর ওর ঘরে নিয়ে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে ধর্ষণ করে। ঘরের ভেতর আগে থেকেই মোবাইলের ভিডিও সেট করা ছিল তা আমি জানতাম না। ধর্ষণের সেই ভিডিও চিত্র সে তার মোবাইলে ধারণ করে। এরপর থেকে সেই ভিডিও আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে আমার স্বামীর কাছে ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেবে এবং ইন্টারনেটে তা ছড়িয়ে দেবে বলে ভয়ভীতি দেখায়।
যার কারণে চারটি বছর ধরে আমাকে যখন যেভাবে খুশি সে ব্যবহার করে যাচ্ছে। সে শুধু একাই আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেনি, তার বন্ধুদের দিয়েও প্রতিনিয়ত আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমার ইজ্জত, মান-সম্মান সবকিছু কেড়ে নেয়ার পর ওই পিশাচের কু-দৃষ্টি পড়ে আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের দিকে। তাই মেয়ের ইজ্জত বাঁচাতে বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করতে হয়েছে আমাকে।

লোমহর্ষক এই ঘটনা ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের হেলাচিয়া গ্রামের। ওই ইউনিয়নের প্রভাবশালী ইউপি সদস্য দরবেশ ব্যাপারীর পুত্র ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন উজ্জ্বল। এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে ফেলেন ওই নারী। তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তার ওপর নির্যাতনের আরো ভয়াবহ কথা। বলেন, চার বছর ধরে আলী হোসেন উজ্জ্বল আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। আমার দেহ ভোগ করেই সে ক্ষান্ত হয়নি। আমাকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে।

তিনি বলেন- ভয়ভীতি, প্রতারণা আর আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে যখন খুশি আমাকে ওর বাড়িতে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতো। এই ঘটনা আমার স্বামীকে বলে দেবে কিংবা ইন্টারনেটে সব ছেড়ে দেবে এই বলে সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতো। এভাবে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ওর রোষানল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি। এ ছাড়া ওর ব্যবসার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আশা অফিস, জাগরণীসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা আমাকে দিয়ে সে তুলে নিয়েছে। প্রথম প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করলেও পরে আর করতো না। গেল এক বছর ধরে সে তার বাড়িতে আমাকে ডাকতো না। নিয়ে যেত মানিকগঞ্জের উত্তর সেওতা এলাকার মনিরা বেগম মনোয়ারার ৪ তলাবিশিষ্ট বাসার চিলেকোঠার একটি কক্ষে। এখানে সপ্তাহে ২-৩ দিন আমাকে নিয়ে আসতো। যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালানোর পর আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসতো। বাড়ির মালিক মনোয়ারা বিনিময়ে ১ হাজার করে টাকা নিতো উজ্জ্বলের কাছ থেকে। শুধু উজ্জ্বলই নয়, তার বন্ধুদেরও নিয়ে আসতো সেখানে। একেক দিন একেক বন্ধুর সঙ্গে আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করাতে বাধ্য করতো উজ্জ্বল। এমনকি ওর স’মিলের কর্মচারীদের দিয়েও আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করাতো। সেই সম্পর্কের ভিডিও করতো সে। এভাবে এক বছর ধরে মানিকগঞ্জের ওই বাসায় ওর কথামতো আসতাম।

নির্যাতিতা আরো বলেন, উজ্জ্বল শুধু আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেই ক্ষান্ত থাকেনি। ওর কু-নজর পড়ে আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের দিকে। মেয়েকে না এনে দিলে কিস্তির টাকা না দেয়ার হুমকি, ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেয়া এবং স্বামীর কাছে সবকিছু বলে দেবে- এমন ভয় দেখাতে থাকে। আমি ওকে বলতাম আমি নিজে মরে যাবো তারপরও আমার মেয়েকে তুলে দিতে পারবো না। তারপরও সে পিছু ছাড়ছিল না। একদিকে কিস্তির টাকার জন্য পাওনাদাররা বাড়ি এসে যা-না তা বলে যাচ্ছে, অন্যদিকে ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে আর সবকিছু স্বামীকে জানিয়ে দেবে- এমন নানা জটিলতার জালে আমি আটকা পড়ে যাই।

কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার মনোয়ারার বাসায় মেয়েকে নিয়ে যাই। প্রথমে মেয়েকে নিচে রেখে আমি ৪ তলা বাসার চিলেকোঠার একটি কক্ষে যাই। সেখানে যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করে প্রথমে উজ্জ্বল আমার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এরপর মেয়েকে চিলেকোঠায় নিয়ে আসতে বলে। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেলে উজ্জ্বল তার মোবাইল ফোনটি ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মেয়ের সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করি।
বুধবার মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে আমার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই পশুর উপযুক্ত শাস্তি না হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই নারী।

 নালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দিলসাদ খান দেলোয়ার জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে আলী হোসেন উজ্জ্বলের নারীঘটিত সমস্যা আছে এটা সত্য।

নালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস মধু বিষয়টি শুনেছেন, তবে না জেনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রকিবুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে মো. আলী হোসেন উজ্জ্বল এবং তার এই অপকর্মে সহায়তা করার জন্য ওই বাড়ির মালিক মনিরা বেগম মনোয়ারার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, বুধবার ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের ধরার চেষ্টাও চলছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া মোবাইলটিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্টটি পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর