× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভালোবাসার ৫০ বছর

বিনোদন

মারুফ কিবরিয়া
২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি...শতরূপে শতবার জনমে জনমে... যুগে যুগে অনিবার। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মাঝেই বহিঃপ্রকাশ ঘটে কোটি মানুষের ভালোবাসা। এই  ভালোবাসাতেই কেউ কেউ একে অপরকে বেঁধে রাখেন জনম জনম ধরে। এক ছাদের তলায় কাটিয়ে দেন সারাটি জীবন। হ্যাঁ, এই ভালোবাসার জোরেই এদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অন্যতম সফল পরিবেশক-প্রযোজক, পরিচালক ও রাজনীতিক শফি বিক্রমপুরী ও তার স্ত্রী নাসিমা সুলতানা দীর্ঘদিন একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দিলেন। পাঁচ-দশ বছর নয়, একটানা পঞ্চাশ বছর পরম ভালোবাসার বন্ধনে নিজেদের বেঁধে রেখেছেন তারা। এটা বিশাল এক দৃষ্টান্তও বটে। ভালোবাসার শক্তি যে কতটা প্রখর তার প্রমাণ মেলে এ দম্পতির ৫০ বছরের পথচলা দেখে।
গত ১৮ই এপ্রিল ছিল তাদের একসঙ্গে অর্ধশত বছর কাটিয়ে দেয়ার পূর্তির দিন। এ উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের শুটিং ক্লাবে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্ণিল এই আয়োজনে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছিলেন শোবিজের বেশ ক’জন তারকা। সন্ধ্যা থেকেই অনুষ্ঠানে বাজতে থাকে একের পর এক রোমান্টিক গান। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা বিজ্ঞাপনের কণ্ঠশিল্পী মাজহারুল ইসলাম। রাত আটটার কিছু পরেই এক এক করে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন তারকারা। শফি বিক্রমপুরী ও নাসিমা সুলতানাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম, চিত্রনায়িকা কবরী, সুচন্দা, দিলারা, মৌসুমী, চিত্রনায়ক ওমর সানি, বাপ্পারাজ, জায়েদ খান, খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ, বাবুল আহমেদ, সংগীততারকা আবিদা সুলতানা, রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, আশরাফ উদাস। এছাড়াও পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, বাদল খন্দকার, খসরু, সোহানুর রহমান সোহানও শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। রাত নয়টায় কেক কাটার মধ্য দিয়ে শফি বিক্রমপুরীর বিবাহবার্ষিকীর মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় অনুভূতি জানাতে গিয়ে চিত্রনায়িকা সুচন্দা বলেন, শফি বিক্রমপুরী ও নাসিমা সুলতানা দুজনই আমাদের চলচ্চিত্রের মানুষ। চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রেখেছেন তারা। তাদের জন্য অনেক শুভকামনা। আহমেদ শরীফ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, একসঙ্গে পঞ্চাশটি বছর তারা কাটিয়ে দিয়েছেন। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। তাদের জন্য দোয়া। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা দম্পতি গান গেয়ে মাতিয়ে তোলেন। বিবাহবার্ষিকী নিয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে শফি বিক্রমপুরী মানবজমিনকে বলেন, এটা খুব স্বাভাবিক। আমরা বেশ
ভালোভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে পঞ্চাশটি বছর কাটিয়ে দিয়েছি। দীর্ঘ এই পথচলায় নিজেদের মধ্যে কোনো অমিল হয়নি। একটা কথা বিশ্বাস করি- যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যাপারে এক যোগ এক সমান দুই হয়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বেলা সেটা ‘এক’ হয়। এই বিশ্বাস নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের ১৮ই এপ্রিল শফি বিক্রমপুরী ও নাসিমা সুলতানা দম্পতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সুদীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ একসঙ্গে তারা সুখ ও আনন্দময় জীবন অতিবাহিত করছেন। বর্তমানে মেয়ে সামিনা সুলতানা (যমুনা) এবং ছেলে মো. হাফিজুর রহমান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন তারা। শফি বিক্রমপুরী চলচ্চিত্র অঙ্গনে ‘ফান্টুমাস’-এর মাধ্যমে পরিবেশক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলের লোকজ প্রেমকাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘গুনাই বিবি’ ছবিটি যৌথ প্রযোজনার মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। ১৯৭২ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ যৌথভাবে প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেন শফি বিক্রমপুরী। ১৯৭৮ সালে ‘রাজদুলারী’  ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে তার অভিষেক ঘটে । ১৯৮৯ সালে ঢাকার মালিবাগে পদ্মা ও সুরমা সিনেমা হল নির্মাণ করে প্রদর্শক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ক্যামেরার পেছনের এই তারকা। তিনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ফিল্মস সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। শফি বিক্রমপুরীর প্রযোজনায় নির্মিত ফোক ফ্যান্টাসি ছবি ‘ডাকু মনসুর’, ‘বাহাদুর’ ও ‘রাজদুলারী’ পরপর সুপার হিট হওয়ায় চলচ্চিত্র অঙ্গনে চমক সৃষ্টি হয়। এরপর তিনি ‘সবুজসাথী’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘মাটির কোলে’, ‘শান্তি অশান্তি’ ‘শশীপুন্নু’, ‘জজসাহেব’, ‘দেনমোহর’ ও ‘অবুঝ মনের ভালোবাসা’সহ অনেক জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। শফি বিক্রমপুরীই চলচ্চিত্র জগতের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন শেষে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে এবং সে সময়ে বিএনপির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মাধ্যমে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এরপর বিভিন্ন সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি সমাজসেবা এবং গ্রন্থ লেখার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তার লেখা গ্রন্থ ‘ঢাকায় পঞ্চাশ বছর’ ২০০৮ সালে প্রকাশ হয়।
ছবি: মুজাহিদ সামিউল্লাহ
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর