× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খুলনায় ২৩ মাসে ১৩০ ধর্ষণ

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার

খুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে জেলার তুলনায় মহানগরীতে ধর্ষণের সংখ্যা বেশি। প্রতি মাসে গড়ে ৫ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গত ২৩ মাসে মহানগরী এলাকায় ৭৩ ও জেলার থানাগুলোতে ৫৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে আটরার আফিল জুট মিল এলাকায়। এখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে তিন দুর্বৃত্ত ধর্ষণ করে। খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২০০২ সালের মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের মে থেকে চলতি ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৩০ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
অধিকাংশ মামলার চার্জশিট হয়েছে। এ বছরের গত তিন মাসে জেলার ৯ থানা ও মহানগরের ৮ থানায় ৫০টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সূত্র জানায়, গত ২৯শে জানুয়ারি আফিল জুট মিলস সিটি গেট এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আটরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষিত হয়। তার পিতা বাদী হয়ে একই দিনে খানজাহান আলী থানায় মামলা করে। ধর্ষিতা ২৯-৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন ছিল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আটরা মশিয়ালী গ্রামের রুস্তুম আলীর ছেলে সাগর আলী, রেনু মিয়ার ছেলে বিল্লাল ও টোকান আলীর ছেলে শফিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও ২০১৫ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর নগরীর লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার ৩নং গলির ঢাকাইয়া হাউজ এপি ভিলা নামের বাড়িতে ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা গণধর্ষণের শিকার হয়। এ সময় ৫ জনে গণধর্ষণের পর পারভীন সুলতানা ও তার পিতা ইলিয়াস চৌধুরীকে হত্যা করে। কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে উত্ত্যক্ত করতো এলাকার কয়েকজন বখাটে সন্ত্রাসী। তাদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছিল। বাবা-ও মেয়েকে হত্যার পর বাড়ির ভেতরে সেফটি ট্যাংকির মধ্যে লাশ ফেলে দিয়ে গুমের চেষ্টা করে খুনিরা। পরে তাদের ঘরে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় লবণচরা থানায় পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদী হয়ে হত্যা, ডাকাতি ও গণধর্ষণের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৬ মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ৯ই মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. কাজী বাবুল খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এছাড়া ধর্ষণের মামলায় একই বছরের ২৪শে মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এ দুটি মামলার চার্জশিটভুক্ত ৫ আসামি হচ্ছে- লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার সাইফুল ইসলাম পিটিল, মো. লিটন, আবু সাইদ, মো. শরিফুল ও মো. পলাশ। এদের মধ্যে শরিফুল পলাতক বাকি ৪ জন কারাগারে রয়েছে। অন্যদিকে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২০০২ সালের মামলাও বিচারাধীন রয়েছে।


খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনিছুর রহমানের দেয়া তথ্য মতে ধর্ষণের অভিযোগ এলে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা রেকর্ড হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা থানায় আসেন। তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়া হয়। জেলায় এ অপরাধ কমেছে বলে তিনি দাবি করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর পাবলিক প্রসিকিউটর জেসমিন পারভীন জলি জানান, জেলায় তিনটি আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার বিচার হচ্ছে। তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল-৩ এ তিন হাজার মামলা বিচারাধীন। প্রতি মাসে গড়ে ৮-১০টি মামলার রায় হচ্ছে। ২০০২ সালের মামলা এখনো বিচারাধীন। ধর্ষণ মামলার বিচার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনার পর একবার গোসল ও দুইবার প্রস্রাব হলে আলামত নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়।
দাকোপ উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দিকার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বছর এ উপজেলায় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেনি।
মানবাধিকার কর্মী মমিনুল ইসলাম জানান, জেলার তিনটি আদালতে বিচার চলছে। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়ায় এ অপরাধ দিন দিন কমছে।
রূপসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছুর রহমান গত মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উল্লেখ করেন, ছেলে-মেয়েরা সামাজিক মননশীল কাজে নিয়োজিত হলে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হবে না।
মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রসু আক্তারের মতে, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। মাদরাসা ও মন্দিরে এ ঘটনা ঘটছে। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর