হত্যা মামলা তুলে না নেয়ায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং সদর ১নং ইউনিয়নের দোকানটুলা মহল্লার মোতালিম মিয়ার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার গ্রাম্য পঞ্চায়েতের মাধ্যমে মোতালিম মিয়ার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার রায় দিয়েছেন ওই মহল্লার সর্দার বাচ্চু মিয়াসহ কতিপয় মাতব্বররা। বৃহস্পতিবার এর প্রতিকার চেয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মোতালিম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৭ সালের মে মাসে ফাতেমা বেগমের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা মার্জিনা আক্তারকে হত্যা করে তার প্রতিবেশী মতিন মিয়া গংরা। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য মামলা চলমান থাকার কারণে বিবাদী পক্ষ তাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই মহল্লার সর্দার বাচ্চু মিয়া ও পঞ্চায়েতের অন্যান্য মাতব্বররা তাদের পক্ষ নিয়ে মামলাটি মীমাংসা করার জন্য ফাতেমা বেগমকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় গত মঙ্গলবার মহল্লার পঞ্চায়েত ডেকে তাকে সমাজচ্যুত করে রায় প্রদান করেন বাচ্চু মিয়াসহ মাতব্বররা। পাশাপাশি রায়ে উল্লেখ করা হয়, ফাতেমার পরিবারের সঙ্গে যে কথাবার্তা বলবে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
সঙ্গে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলে পঞ্চায়েতে উপস্থিত লোকদের ও মহল্লাবাসীদের জানিয়ে দেয়া হয়। এই রায়ের ফলে বর্তমানে ফাতেমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছেন। তার স্কুল পড়ুয়া কন্যার পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। রায়ের ফলে মহল্লায় বসবাস করাই মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে ওই পরিবারটির। সরজমিনে ওই মহল্লায় গিয়ে এলাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। এই বিষয়ে গ্রাম্য মাতব্বর বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আপনি যা ইচ্ছা তাই লিখেন, কোনো সমস্যা নাই। এই রায় আমি একা দেইনি মহল্লাবাসীকে নিয়ে আমি রায় দিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বানিয়াচং শাখার সভাপতি সাংবাদিক মোশাহেদ মিয়া বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এইভাবে একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অধিকার কারো নেই। সমাজে বসবাস করার যে অধিকার সেটা কেউ ইচ্ছে করলেই খর্ব করতে পারে না। এটা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে উপজেলা
নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রাম্য মাতব্বররা সমাজচ্যুত করে রায় দিবে এ কাজ করার কোনো সুযোগ নাই। বর্তমানের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়ে আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নিবো। এই ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখবো।