× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুলাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম

বাংলারজমিন

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার

কুলাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি কাঁচা ঘর নির্মাণে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ করা হয়েছে। উপজেলায় মোট তিন শত ঘর নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আড়াই শতাধিক ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। কিন্তু দরিদ্র এসব মানুষের ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। ঘর নির্মাণের পরিবহন ও ভিটাভরাটসহ অন্যান্য খরচ প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা দেয়ার কথা থাকলেও সেই খরচ নিজেরাই বহন করেছেন বলে জানান উপকারভোগীরা।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুজাপুর, কানাইটিকর, গণিপুর এবং জয়চণ্ডী ইউনিয়নের রংগীরকুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর শিডিউল অনুযায়ী ১৭৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ঘরে ৪ বর্গ ইঞ্চি ১২ ফুটের পিলারের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ৩ বর্গ ইঞ্চি ১০ ফুট এবং বারান্দা ও ল্যাট্রিনে ১০ ফুটের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ৮ফুট পিলার। এসব পিলারে ৬ মিলি পরিমাণের ৪টি রডের পরিবর্তে ননগ্রেডের ৩টি করে রড ব্যবহার করা হয়েছে।
পিলারের রড বাঁধাইয়ে রিং (চুড়ি) হিসেবে রডের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে ৮ নম্বর জিআই তার। ১নং ইটের বদলে ৩নং ইটের খোয়া (ডাস্টসহ) দিয়ে পিলার বানানো হচ্ছে। পিলার ঢালাই শেষে চটের মাধ্যমে ১৪ থেকে ২১ দিন পানি দেয়ার (কিউরিং) কথা। কিন্তু সেখানে চটের বস্তা ব্যবহার করা হয়নি, এতে পরিমাণমত পানিও দেয়া হয়নি। প্রতি ফুটে একটি করে রিং দেয়ার কথা থাকলেও দেড় ফুট পর পর লাগানো হয়েছে রিং। ল্যাট্রিন নির্মাণে ৮টি করে রিং স্লাবের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ৫-৬টি। ঘরের মেঝে ১৫০ মিলিমিটার বালি দেয়ার পর ডাবল লেয়ার পলিথিনের উপর ৩ ইঞ্চি পরিমাণ ঢালাই দেয়ার নিয়ম থাকলেও দেয়া হয়েছে ১ থেকে দেড় ইঞ্চি। ঘরের চালা ও দরজা-জানালায় লাগানো হয়েছে বেনামী কাঠ। যা পরিমাপেও অনেক ছোট। প্রতিটি দরজা ও জানালায় রং করে লোহার গ্রিল লাগানোর নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে এসব ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়ে উপকারভোগীরা।
নীতিমালা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে পিআইসির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সদস্য সচিব (উপজেলা প্রকৌশলী) এবং সদস্যরা হলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কমর্কতা (পিআইও), সহকারী কমশিনার (ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু সকলের সমন্বয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজ করার কথা থাকলওে পিআইসির সভাপতি (ইউএনও) একক ক্ষমতাবলে তার পছন্দের লোকজনকে দিয়ে প্রকল্পের কাজটি করাচ্ছেন। যা নিয়ে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের কানাইটিকর গ্রামের রব উল্লাহ (৬৫) আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। শুরুতে খুশি থাকলেও নির্মাণের পর খুশি হতে পারেননি। প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এমন ঘর দিয়ে কি হবে, ঘূর্ণিঝড় আসলে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
এদিকে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে পছন্দসই দু’জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। যারা ঢাকার বাসিন্দা। সেই ঠিকাদারের নিয়োগকৃত রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রিরা ইচ্ছেমাফিক কাজ করেছেন। সেই মিস্ত্রিদের কিছু বললেই তারা ধমক দিয়ে খারাপ আচরণ করেছেন উপকারভোগীদের সঙ্গে। একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া যায় ইউএনও’র মনোনীত ঠিকাদার রাজিব মণ্ডল এসব কাজ করিয়েছেন। প্রথমে তিনি বলেন, আমি এ কাজের কিছুই নই। বিস্তারিত বলার পর স্বীকার করে বলেন, তিনি ঠিকাদার নন, এ নির্মাণ কাজের শ্রমিক। সবকিছু জানেন ইউএনও। তিনিই সব বলতে পারবেন। আমি শুধু টিন কিনে দিয়েছি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল লাইছ সাংবাদিকদের জানান, কিছু কাজে অনিয়মের খবর পেয়েছি। তা সংশোধন করে দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-০২ এর উপ-পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এসএম হামিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, এ প্রকল্পটি উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা বাস্তবায়ন করছেন। কাজে কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া গেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর