চারদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের ছিন্ন ভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। এলোমেলো পড়ে আছে মৃতদেহ। একটি দুটি নয়। সারি সারি মৃতদেহ। তার মধ্য দিয়ে যারা বেঁচে আছেন, জীবন নিয়ে দিশেহারা হয়ে ছুটছিলেন তারা। কারো হাত উড়ে গেছে। কারো শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
শার্টে রক্ত। এ এক ভয়াবহ অবস্থা। শ্রীলঙ্কার সাংগ্রি-লা হোটেলে অবস্থান করা ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডন বিজনেস স্কুলের প্রফেসর কিয়েরেন আরাসারাতœম সেখানে চালানো সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবেই। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, হামলার সঙ্গে সঙ্গে হোটেল সাংগ্রি-লা’তে সবার মধ্যে ভয়াবহ এক আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশৃংখল হয়ে পড়ে সব কিছু।
আমি ডানদিকে রুমের দিকে তাকালাম। দেখলাম সর্বত্রই রক্ত আর রক্ত। সবাই দৌড়াচ্ছে। সে সব মানুষ জানেন না কি ঘটছে। অনেকের শার্টে রক্ত। তাদের কেউ একজন একটি বালিকাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠাচ্ছেন। দেয়াল আর মেঝেতে তখন রক্তের বন্যা।
২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটাই সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এর ফলে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সেই সময়ের ভীতি আবার ফিরেছে। রোববারের ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২৯০ দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫০০ আহত ব্যক্তির মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিহতের মধ্যে ৫ জন বৃটিশ রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন অনিতা নিকোলসন (৪২) ও তার ১১ বছর বয়সী ছেলে অ্যালেক্স। তার সাংগ্রি-লা হোটেলে সকালে যখন নাস্তা করছিলেন তখনই ওই হামলা হয়। অনিতার লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি সিঙ্গাপুরে খনি ও ধাতব কোম্পানি অ্যাঙ্গলো আমিরাকানে ম্যানেজিং কাউন্সেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ওই হামলায় আটকা পড়েছিলেন বৃটিশ বেশ কিছৃ মানুষ। তারা ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। তার মধ্যে বৃটেনের সারে’র জাতীয় স্বাস্থ্য স্কিমের ডাক্তার জুলিয়ান ইমানুয়েল অন্যতম। তিনি ছিলেন সিনামন গ্রান্ড হোটেলে। তিনি অনলাইন দ্য সান’কে বলেছেন, এত ভয়াবহতা আমি জীবনে কখনোই দেখি নি। আমার স্ত্রী ও সন্তানরা এটা দেখে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ দৃশ্য কোনোদিন ভুলবো না। শুধু এই কারণটির জন্য সারা জীবন ইস্টার সানডে’কে স্মরণ করবো আমরা।
সন্ত্রাসী এ হামলার জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদীরা দায়ী বলে দাবি করছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এ অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যদিও কেউ ওই হামলার দায় স্বীকার করে নি। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, হামলার বিষয়ে অসংখ্য গুজব। তবে কারা এর জন্য দায়ী তা নিরেটভাবে এখনও জানা যায় নি। এ জন্য আমরা শ্রীলঙ্কার পুলিশের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করবো। আসন্ন দিনগুলোতে তিনি শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।