লীগ পর্বের শেষদিকে এসে হারতে শুরু করে আবাহনী। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান হারিয়ে সুপার লীগ উঠলেও দেখা দেয় শিরোপা হারানোর শঙ্কা। অন্যদিকে ২০ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ছয় নিশ্চিত করা লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ শিবিরে বাজতে শুরু করে শিরোপা জয়ের সুর। কিন্তু সুপার লীগে এসে বদলে যায় সব হিসাব। টানা ৫ জয়ে শেষ পর্যন্ত টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। গতকাল বিকেএসপিতে সুপার লীগের শেষ ম্যাচে সৌম্য সরকারের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৩১৭ রানের পাহাড় টপকে জয় তুলে নেয় তারা। শেষ ম্যাচ জিতে আবাহনীর সমান ২৬ পয়েন্ট পেলেও রান রেটে পিছিয়ে থেকে টানা দ্বিতীয়বার রানার্সআপ হয় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের (ডিপিএল) ইতিহাসে এ নিয়ে ২০ বার শিরোপার মুকুট পরলো আবাহনী।
তাদের পর সর্বোচ্চ ৯ বার শিরোপা জিতেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আবাহনীর জয়ের নায়ক সৌম্য সরকার লীগের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে তারই হাতে।
১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ঢাকা মেট্রোপলিস প্রথম বিভাগ ক্রিকেট নামে শুরু হয় ঢাকার শীর্ষ এই ক্লাব প্রতিযোগিতা। প্রথম মৌসুমের চ্যাম্পিয়নও ছিল আবাহনী। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে প্রথম বিভাগ রূপান্তরিত হয় প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের আসর ছিল ৪২তম। ২০০৩-০৪ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে খেলা হয়নি। দু’বার যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী, একবার করে মোহামেডান ও বিমান। একমাত্র ক্লাব হিসেবে দু’বার হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ লিস্ট ‘এ’ মার্যাদা পাওয়ার পর এ নিয়ে আবাহনী পেলো তৃতীয় শিরোপার দেখা।
গতকাল বিকেএসপিতে টসে জিতে শেখ জামাল ৩১৮ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় আবাহনীকে। দলের হয়ে তানভীর হায়দার খেলেন লিস্ট-এ ক্যারিয়ার সেরা ১৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস। এছাড়াও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন আরেক স্পিনার ইলিয়াস সানি। আবাহনীর হয়ে ৫৬ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জবাব দিতে নেমে আবাহনীর দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমি ও সৌম্য সরকার ওপেনিং জুটিতে রেকর্ড ৩১২ রান তোলেন। দু’জনের ব্যাটিংয়েই দল খুঁজে পায় জয় সেই সঙ্গে শিরোপা পথ। অমি ১০০ রান করে আউট হলেও সৌম্য ২০৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। দু’জন উপহার দেন ঢাকা লীগের সর্বোচ্চ রানের জুটি। সৌম্য তার ইনিংসে ঢাকা লীগে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলার পাশাপশি ১৬ ছক্কার রেকর্ডও গড়েন। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী।
লীগ পর্বে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, শেখ জামাল ধানমন্ডি ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে হেরেছিল আবাহনী। রূপগঞ্জের চেয়ে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে সুপার লীগ শুরু করে দলটি। এই পর্বে রূপগঞ্জের দুই হার আর নিজেদের পাঁচ জয়ে শিরোপা ধরে রাখে তারা। ১৬ ম্যাচে তাদের মোট পয়েন্ট ২৬। তবে মোসাদ্দেক হোসেনের আবাহনীর রানরেট ০.৮৬৬। অন্যদিকে নাইম হাসানের রূপগঞ্জের রানরেট ০.৫১৭।
জিতেও হতাশ রূপগঞ্জগতকাল মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৮৮ রানে হারিয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তবে তাতে শিরোপার মুকুট পড়তে পারেনি দলটি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো হয়েছে রানার্সআপ। ৩২৭ রান তাড়ায় ২৩৯ রানে গুটিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। পয়েন্ট আবাহনীর সমান হলেও রানরেটে অনেক পিছিয়ে ছিল রূপগঞ্জ। তাতেই শিরোপা হাতছাড়া হয় দলটি। রূপগঞ্জের হয়ে ১৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন মোহাম্মদ নাঈম। এছাড়াও ওপেনার মেহেদী মারুফ করেন ৫৪ ও মুমিনুল হক ৫২ রান। জবাব দিতে নেমে প্রাইম ব্যংকের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৪ রান আসে নাহিদুল ইসলামের ব্যাট থেকে। তবে তাতে হার শুধু হারের ব্যবধানই কমেছে। রূপগঞ্জের হয়ে পেসার মোহাম্মদ শহীদ নেন ৪ উইকেট।
ঢাকা লীগে সর্বোচ্চ রানের জুটিজুটি রান উইকেট ভেন্যু মৌসুম
জহুরুল-সৌম্য (আবাহনী) ৩১২ প্রথম মিরপুর ২০১৮/২০১৯
মাহাবুবুল-ধীমান ঘোষ (চট্টগ্রাম) ২৯০ তৃতীয় ফতুল্লা ২০০৬/২০০৭
মুমিনুল-ডি সিলভা (দোলেশ্বর) ২৭৬ চতুর্থ বগুড়া ২০১৩/২০১৪
বিজয়-শান্ত (আবাহনী) ২৩৬ প্রথম সাভার ২০১৭/২০১৮