অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার ইস্যুটিই হয়ে উঠেছে স্পেনের সাধারণ নির্বাচনের মূল বিতর্কের বিষয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পরিস্থিতি নিয়ে দুষছেন একে অপরকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বৈদেশিক সম্পর্ক সব ছাড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে কাতালুনিয়া প্রদেশের স্বাধীনতার ইস্যুটি। রোববারের টেলিভিশন বিতর্কেও এ নিয়ে মুখোমুখি হন প্রধান চার প্রার্থী। কিন্তু ২৮শে এপ্রিলের নির্বাচনের আগে ভোটারদের টানতে পরিপূর্ণ কোনো পরিকল্পনার কথা বলতে পারেন নি প্রার্থীরা। এ খবর দিয়েছে ডয়েচে ভেলে।
খবরে বলা হয়, ১৯৭০ সালে গণতন্ত্রে ফেরার পর এবারের নির্বাচনই দেশটিতে সবচেয়ে বড় বিভক্তি বয়ে এনেছে। টিভি বিতর্কে কাউকেই বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। নানা জরিপ বলছে, সরকার গঠন করতে কোনো দলের প্রয়োজনীয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ।
কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সম্ভাব্য জোট নিয়েও শোনাতে পারেনি আশার বাণী। পুরো বিতর্কেই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বামপন্থি সোশ্যালিস্ট দলের পেদ্রো সানচেজের বিরুদ্ধে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করার অভিযোগ এনেছেন রক্ষণশীল পিপলস পার্টির নেতা পাবলো কাসাদো এবং মধ্য-ডানপন্থি সিউদাদানোস দলের আলবার্ট রিভেরা। আগাম জরিপে এগিয়ে থাকলেও, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সানচেজের পক্ষে নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কাসাদো বলেন, সানচেজের সোশ্যালিস্ট সরকারের কারণে স্পেনের একতা আজ হুমকির মুখে। যারা স্পেনকে ভেঙে ফেলতে চায়, তাদের প্রিয় নেতা সানচেজ। রিভেরা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ভোটারদের দিকে, স্পেনকে যারা ডুবাতে চায়, তাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ ছেড়ে দিতে চান? কাতালুনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা কিম তোরার সঙ্গে সানচেজের বৈঠকের একটি ছবি দেখিয়ে নিজের যুক্তি প্রমাণের চেষ্টাও চালান রিভেরা।
২০১৭ সালের অক্টোবরে স্বাধীনতা প্রশ্নে এক গণভোটের আয়োজন করে কাতালুনিয়া। কিন্তু স্পেনের আদালত সে গণভোট অবৈধ ঘোষণা করলেও একপাক্ষিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্পেনের প্রদেশটির স্থানীয় সরকার। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার ঘোষণা কার্যকর করতে না পারলেও স্পেনের রাজনীতিতে এখনো রয়েছে এর প্রভাব। ফলে কাতালুনিয়া ইস্যুতে পরবর্তী কয়েক বছর কী হতে যাচ্ছে জানতে পুরো স্পেনবাসী তাকিয়ে রয়েছে আসছে রোববারের নির্বাচনের দিকে। গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রী হন সানচেজ। স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকলেও, পূর্বসূরি রক্ষণশীল মারিয়ানো রাখইয়ের চেয়ে কাতালান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত উদার ছিলেন সানচেজ।
জোট সরকার কি হবে?
সানচেজের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রীরা এগিয়ে আছেন বলে দেখা গেছে বিভিন্ন জরিপে। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো পর্যাপ্ত আসন তারা না-ও জিততে পারেন। ব্যয়-সংকোচনবিরোধী পোদেমোস পার্টির সঙ্গে সমঝোতাও এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কাতালুনিয়ার জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গেও সমঝোতায় যেতে হতে পারে সানচেজকে। অন্যদিকে, অপর তিন ডানপন্থি দলের জন্য সরকার গঠন করা আরো কঠিন হয়ে যেতে পারে। একাধিক মতামত জরিপে মানুষ সোশ্যালিস্টস এবং সিউদাদানোস দলের মধ্যে জোট দেখতে চেয়েছেন। রিভেরা বরাবরই এ সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও সানচেজ এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। ২০১৩ সালে গঠন হওয়া চরম ডানপন্থি ভক্স পার্টিকে অবশ্য বিতর্কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কোনো প্রার্থীও দলটির নাম উল্লেখ করেন নি। সানচেজ একবার দলটির নেতা সান্তিয়াগো আবাসকালের নাম উচ্চারণ করেছেন, তবে সেটিও ভোটারদের চরম ডানপন্থিরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য। ধারণা করা হচ্ছে, চার দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো কোনো চরম ডানপন্থি দল দেশটির পার্লামেন্টে আসন পেতে যাচ্ছে। তবে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বা কাকে ভোট দেবেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারা ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপের ফল যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।