× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রশাসনের কোন্দলে বেহাল জাবির মেডিকেল সেন্টার

অনলাইন

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি থেকে
(৫ বছর আগে) এপ্রিল ২৪, ২০১৯, বুধবার, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের অপর্যাপ্ত জনবল, ওষুধের স্বল্পতা ও প্যাথোলজি বিভাগের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সঙ্কট বছরের বহুদিনের। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল আধুনিকায়নের দাবি জানিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু সঙ্কট সমাধানের আদৌ কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমস্যার সমাধান না হওয়ার প্রধান কারণ প্রশাসনের অন্তকোন্দল। মেডিকেল সেন্টার সূত্র বলছে, গতবছরে হওয়া বেশ কিছু নিয়োগ নিয়ে ভিসির ওপর ‘নাখোশ’ মেডিকেল সেন্টারের পরামর্শক কমিটির প্রধান প্রো-ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেন। আর এ কারণেই ১৬ হাজার শিক্ষার্থী ও কমিউনিটির চিকিৎসাসেবা দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির বেহাল দশা।  

জানা যায়, মেডিকেল সেন্টারে জনবল সঙ্কট প্রবল হলে গত বছরের ৩১শে জুলাই ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এডহক ভিত্তিতে ডাক্তার পদে সানজিদা মৌরিন, একই তারিখে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ল্যাব সহকারী পদে রনিউল ইসলাম, ফার্মাসিস্ট পদে সিরাজুল ইসলাম ও একই বছরের গত ২০শে সেপ্টেম্বর পিয়ন পদে কামরুল ইসলাম, এ বছরের ৩১শে মার্চ ক্লিনার পদে কিরণ বাবুকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ অধ্যাপক আমির হোসেনের পছন্দ হয়নি।
ফলে মেডিকেল সেন্টারের পরামর্শক কমিটির প্রধান হওয়ার সত্ত্বেও সঙ্কট নিয়ে তিনি কোন পরামর্শ বা প্রস্তাব ভিসির কাছে পেশ করেন না। বামপন্থি একটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মেডিকেলের সঙ্কট নিয়ে বৈঠকেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

মেডিকেল সেন্টারের একজন কর্মকর্তা জানান, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে ডাক্তার পদে নিয়োগ দিতে আগ্রহী ছিলেন অধ্যাপক আমির হোসেন। কিন্তু পছন্দের ওই ব্যক্তি নিয়োগ  না পাওয়ায় তিনি মেডিকেল সেন্টার নিয়ে আর মাথা ঘামান না।

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, মেডিকেলে কি হয়, তা নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল নই। কোন বিষয়ে আমাকে জানানো হয় না। শুধু ছাত্ররা ঘেরাও করলে আমাকে ডাকা হয়। এটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্কটের কারণে হতে পারে। মেডিকেলের এডহক ও দৈনিক মজুরির নিয়োগ নিয়োগ নিয়ে আমাকে জানানো হয়নি। ডাক্তার সানজিদা মৌরিন ভাইভা দিয়ে সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। তার নিয়োগ ঠিক আছে। কিন্তু অন্যান্য দৈনিক মজুরির  নিয়োগগুলো ফেয়ার না। এ নিয়ে ভিসি মহোদয়কে প্রশ্ন করলেও আমি ভাল উত্তর পাইনি।

প্রশাসনিক কোন্দলে মেডিকেলের অবকাঠামো সঙ্কট প্রবল হয়ে আছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অপ্রতুল আসবাব নিয়ে চলছে মেডিকেল সেন্টার। রোগী বসার পর্যাপ্ত চেয়ার নেই। নেই প্রয়োজনীয় জনবল। প্যাথলজি বিভাগে যৎসামান্য সরঞ্জাম। এমনকি ডাক্তার রুমে ওজন মাপার মেশিন পর্যন্ত নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৬ হাজার শিক্ষার্থী ও কমিউনিটির জন্য রয়েছে মাত্র ছয়টি এম্বুলেন্স। এর মধ্যে একটি এম্বুলেন্স ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বাসার জন্য নির্ধারিত থাকে। আরেকটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর এখনো আসেনি। বাকি চারটির মধ্যে দু’টি ১৬ বছরের পুরানো, যার মধ্যে একটি বর্তমানে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। সচল তিনটি এম্বুলেন্সের জন্য রয়েছে ৬ জন চালক। অথচ তিন শিফটে একটি এম্বুলেন্সের জন্যই তিনজন চালক দরকার।

এম্বুলেন্স অনেকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও আছে। গত সেপ্টেম্বরের গাড়ি ব্যবহারের তালিকা থেকে দেখা যায় সচল তিনটি এম্বুলেন্স ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ও ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক কর্মকর্তারা ব্যবহার করেছেন। ভিসির বাসায় থাকা এম্বুলেন্সটি ৪৩ শতাংশ সময় শিক্ষার্থীরা ও ৫০ শতাংশ সময় শিক্ষকরা ব্যবহার করেছেন। চালকরা অভিযোগ করেন, অনেক ছাত্র অসুস্থ বলে এম্বুলেন্স নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।

মেডিকলে সেন্টারে ৩২ ধরণের ওষুধ থাকার তালিকা থাকলেও অনেক ওষুধই থাকে না। ওষুধ ক্রয়ের বাজেটও অপ্রতুল। মেডিকেল সেন্টারের ওষুধ ক্রয়ের জন্য প্রতি তিনমাসে বাজেট দেয়া হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যার মধ্যে যাবতীয় ওষুধ, ড্রেসিং ও প্যাথলজি রি-এজেন্ট সামগ্রী কিনতে হয়। ১৬ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য হিসাব করলে এই বাজেট হয় প্রতি মাসে মাথাপিছু ৮টাকা।

মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার রয়েছে ৯ জন যার মধ্যে দু’জন ছুটিতে রয়েছেন। এর পাশাপাশি ৬জন খন্ডকালীন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ডাক্তার রয়েছে। কিন্তু মেডিকেল সেন্টারে স্থায়ী ১৪ জন ডাক্তারের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল চারতলা হওয়ার কথা থাকলেও তা একতলায় থেমে আছে। ফলে প্রশাসনিক কাজ ও মেডিকেল সেবা একই রুমে করতে হচ্ছে।

এদিকে ১৩ই এপ্রিল রাতে ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে চিকিৎসা অবহেলাকে দায়ী করে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেলের দাবিতে ১৩ দফা দাবি পেশ করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে বিভিন্ন দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ইসিজি মেশিন কেনা হয়েছে। যদিও এই মেশিন চালানোর জন্য জনবল বা কোন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নেই মেডিকেল সেন্টারে।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, প্রশাসনের কাছে আমরা মেডিকেলের বিভিন্ন সঙ্কটের কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু তারা শিক্ষার্থীদের দাবি আমলে নিচ্ছে না। ২৪শে এপ্রিলের মধ্যে আমাদের দাবি সন্তোষজনকভাবে মানা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।

এর আগে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল আধুনিকায়নে শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ  থেকেও সাত দফা দাবি পেশ করা হয়। গত আগস্ট মাসে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেডিকেল আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, যেকোন সঙ্কটে প্রশাসন ১৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মূলা ঝুলায়। এই প্রকল্প অসীম দিগন্তের মতো। প্রকল্প যতই কাছে আসে, ততই দূরে সরে যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর