× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কেঁচো সার উৎপাদনে মডেল খামা গ্রাম

বাংলারজমিন

সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) থেকে
২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার

খামা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ইতিমধ্যে এ গ্রামের নাম ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। কৃষি প্রযুক্তিতে সাড়া জাগানো একটি আদর্শ গ্রাম খামা। যে গ্রামের অধিকাংশ লোকের পেশা কৃষি। এ গ্রামে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৪শ’ ৬০। আয়তনের তুলনায় এ গ্রামে জনসংখ্যা অনেক বেশি। জমি কম।
কৃষি ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি এ গ্রামের অনেকেই এখন কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। এতে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেকে। কেঁচো সার উৎপাদনে মডেলে পরিণত হয়েছে গ্রামটি। এ গ্রামের ৩২০টি পরিবার বর্তমানে কেঁচো উৎপাদন ও ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহার করে এ গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন। সালমা বেগম নামে হতদরিদ্র এক নারী স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। এমন অনেকে কেঁচো সার চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ী কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক খামা গ্রামটিকে ভার্মি গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেন। পাকুন্দিয়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী, হোসেনপুর, মনোহরদী, কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষকসহ পান ও সবজি চাষিরা এখান থেকে কেঁচো সার কিনে নিয়ে তাদের জমিতে ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও কেঁচো সার উৎপাদনকারীরা কেঁচো কিনতে এখানে আসেন।  গ্রামটি তাই কেঁচো সার বা ভার্মি গ্রাম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে এ গ্রামের নিজাম উদ্দিন নামে এক কৃষককে কেঁচো সার উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেন পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিমুল হক সোহাগ। তার পরামর্শে নিজাম উদ্দিন পরিত্যক্ত একটি ঘামলায় গোবর, কলাগাছের কুচি, কচুরিপানা কুচি, কিছু আম পাতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে তার ওপরে কেঁচো দিয়ে ছালা কিংবা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই কেঁচো সার জমিতে ব্যবহারের উপযোগী হয়। নিজাম উদ্দিন তার নিজের জমিতে এ সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পান। এতে এ সার উৎপাদনে তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। পরে তিনি কেঁচো সার উৎপাদন বৃদ্ধি করেন।  গ্রামের ২-১ জন নিজাম উদ্দিনের কাছ থেকে কেঁচো সার নিয়ে তাদের জমিতে ব্যবহার করেন। এতে তারাও ভালো ফলন পান। এ সারের গুণাগুণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অন্য চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হয়। এভাবে একে একে পুরো গ্রামে কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহারে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। নিজাম উদ্দিন কেঁচো সার চাষে এ উপজেলার চাষি ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের কেঁচো সারের কলাকৌশল শিখিয়ে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক লাভ করেন। বছর খানেক আগে সালমা নামের খামা সিআইজি সদস্য হতদরিদ্র এক নারী কৃষি অফিসের সহায়তায় কেঁচো উৎপাদন শুরু করেন। ছয়টি গামলা দিয়ে শুরু করে এখন তিনি প্রায় শ’খানেক গামলায় কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। প্রতিদিন কেজি প্রতি ২০টাকা দরে কেঁচো সার ও প্রতি কেজি ৮শ টাকা দরে কেঁচো বিক্রি করছেন। এতে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। স্বাবলম্বীও হয়েছেন। সম্প্রতি কৃষি বিভাগের উদ্যোগে তিনি ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে ঘুরেও এসেছেন। নিজাম উদ্দিন, সালমা ছাড়াও এ গ্রামের জালাল উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, রহিমা আক্তার, নাছিমা আক্তার ও রাবিয়া বশরীসহ প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহারে সম্পৃক্ত। এতে তারা যেমন জমিতে চাষাবাদ করে  ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। তেমনি কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন। এভাবে এ গ্রামটি ভার্মি গ্রামে পরিণত হয়েছে। এ গ্রামের লোকদের কেঁচো সার উৎপাদনে সাফল্য দেখে আশপাশের গ্রামসহ দূরদূরান্তের লোকজনও তাদের জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার ও উৎপাদন শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে আঙ্গিয়াদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ মানবজমিনকে বলেন, গাছের প্রয়োজনীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের অধিকাংশই কেঁচো সারে পাওয়া যায়। তাই এ সার ব্যবহারে মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া মাটির পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ মাটির বিষক্রিয়া দূর করে। এ সারের গুণাগুণ মাটিতে দীর্ঘদিন বজায় থাকে ফলে একবার ব্যবহার করলে পরবর্তী ফসলে অন্যান্য সারের পরিমাণ কম লাগে। মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় তাই সেচের পরিমাণ কম লাগে। তুলনামূলকভাবে বড় ও উৎকৃষ্ট ফল-সবজি পাওয়া যায়। ফসলে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে।
পান ফসলে ব্যবহারে পানের পুরত্ব ও স্বাদ বৃদ্ধি পায়। এ সার উৎপাদন খরচও অনেক কম। তাই সকল কৃষককে এ সার উৎপাদনে সম্পৃক্ত করতে পারলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেক কমে আসবে ও সরকারের এ খাতে ভর্তুকি সাশ্রয় হবে। সে লক্ষ্যে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর