সোমবার থেকে জাতীয় দলের মাত্র ৫ ক্রিকেটার নিয়ে শুরু হয়েছে টাইগারদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ চলায় বাকি ক্রিকেটাররা থাকতে পারেননি বিশ্বকাপের ক্যাম্পে। তবে প্রথম দিন থেকেই অনুশীলনে ছিলেন তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেন। ঢাকা লীগের ৪২তম আসর শেষ হলেও ক্যাম্পের চিত্র বদলায়নি। গতকালও প্রস্তুতিতে ছিলেন ৫/৬ জন ক্রিকেটারই। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ শুরু হবে ৩০শে মে থেকে। দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে টাইগারদের স্কোয়াড নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। খারাপ খেলার শঙ্কাও যেমন আছে ভক্তদের তেমনি আছে ভালো করার দৃঢ় আশাও।
সবচেয়ে বেশি ভয় ইনজুরি ও ইংল্যান্ডের কন্ডিশন নিয়ে। বিশ্বকাপের আগে অবশ্য আরো একটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ দলের জন্য। মূলত আয়াল্যান্ড সফরে ত্রিদেশীয় সিরিজেই চূড়ান্ত পরীক্ষা অপেক্ষা করছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের। এসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। আশার সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছেন তার কিছু ভয়ের কথাও। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ইংল্যান্ডে কন্ডিশন কতটা কঠিন হতে পারে?তামিম: একেবারেই আলাদা আবহাওয়া হবে সম্ভবত। একটা বিষয় যে, আমার কাছে মনে হয়, আমরা এখানেই কঠোর পরিশ্রম করে নিচ্ছি। ওই আবহাওয়ায় রানিং করা, ব্যাটিং করা, ফিল্ডিং করা, জিম করা- খুব চ্যালেঞ্জিং। এই যে কষ্টটা আমরা এখানে করে নিচ্ছি, যখন আমরা ওই ধরনের ওয়েদারে যাবো, আমার কাছে মনে হয় যে এটা ফিজিক্যাল ফিটনেসের দিক থেকে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: মে’র শুরুতে আয়ারল্যান্ডে বড় চ্যালেঞ্জটা কি? তামিম: আমার কাছে মনে হয় কন্ডিশনটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ আয়ারল্যান্ড এমন একটা দেশ যেখানে আমরা খুব বেশি খেলি নাই। শেষ যেবার খেলেছিলাম, তখনও উইকেট খুব একটা সহজ ছিল না। তাই আমার কাছে মনে হয় আগের সাতটা দিন এবং প্রস্তুতি ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচটা আমরা কিভাবে শুরু করি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, সেখানে আরও একটা প্রতিপক্ষ থাকবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যারা এখন খুব ভালো ফর্মে আছে।
প্রশ্ন: ঢাকা লীগ না খেলায় কতটা উপকৃত?তামিম: আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। আমার মূলত যে জিনিসটা ছিল, ব্যাটিংয়ের চেয়েও বেশি হলো ফিজিক্যাল ফিটনেস। আমি যে লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ মিস করেছিলাম, আমার মনে হয় সেই লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ড সফরের ভালো-মন্দ দিক কোনটি?তামিম: বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেটার দুটো দিকই থাকতে পারে, ভালো করলে একরকম আবার খারাপ করলে একরকম। আপনি পার্সোনালি এই সিরিজটাকে কীভাবে দেখছেন? নেগেটিভ যদি ধরতে হয় তাহলে একটাই নেগেটিভ পার্ট আছে। সেটা হলো, আমরা হয়তোবা দেড় মাসের মধ্যে ১৩-১৪টা ম্যাচ খেলবো। তাছাড়া আর কোনো নেগেটিভ পয়েন্ট আমি দেখি না। কারণ, ওইসব কন্ডিশনে আমরা খুব বেশি খেলার সুযোগ পাই না। আমার কাছে মনে হয়, সেখানে খেলোয়াড়দের বিশ্রামটাও গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, আমরা সবাই জানি যে বিশ্বকাপে বিশ্রামের সুযোগ খুব একটা হবে না। আয়ারল্যান্ডে পাঁচটা ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে। কিন্তু ওখানেও দুইটা-একটা ম্যাচ করে যদি একটু চেঞ্জ করা হয় সবাইকে সতেজ রাখতে, তা হবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: আপনার ওপেনিং পার্টনার সৌম্যের ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে কি বলবেন?তামিম: এটা দারুণ অর্জন। বাংলাদেশি কেউ এই প্রথম ২০০ রান করেছে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে। যদিও আমরা খেলবো একেবারেই ভিন্ন একটা কন্ডিশনে, ভিন্ন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে, তবুও রান করাটা সবসময়ই ইতিবাচক। এটা আত্মবিশ্বাস যোগায়। সে কোথায় রান করেছে এটা মুখ্য বিষয় নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে সে রান করেছে। এটা তার জন্য খুব পজিটিভ যে সে আয়ারল্যান্ডে যাবার আগে দুটো বড় ইনিংস খেলেছে।
প্রশ্ন: বার বার ওপেনিং পার্টনার পরিবর্তনের প্রভাব কতটা?তামিম: পার্টিকুলার ম্যাচে তো এমন কোনো সমস্যা করে না। কিন্তু যখনই আপনার একজন নিয়মিত ওপেনিং সঙ্গী থাকবে, তখন যেটা হয়, আমরা দুজনই আমাদের খেলাটাকে ভালো বুঝতে পারি আর কি। অনেক সময় হয়তোবা এমন থাকে যে, আমার টাইমিং ভালো হচ্ছে না। হয়তো আমি মারছি, কিন্তু ফিল্ডারের কাছে চলে যাচ্ছে। তখন সে সুযোগ নিতে পারে। একইভাবে ওর সাথে যদি এই জিনিসটা হয়, তবে আমার চান্স নিতে হয়। তবে আমি নিশ্চিত, লিটন ও সৌম্য যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। আমি নিশ্চিত, তারা কতটা ভালো খেলোয়াড় তা বিশ্বকে দেখানোর এখনই সময়।
প্রশ্ন: এবারের বিশ্বকাপে আপনার লক্ষ্য? তামিম: কোন টার্গেট না, কোন কিছু না। কারণ আমার কাছে মনে হয় যে আমি যখনই কোন কিছু নিয়ে বেশি ভাবি, তা পাই না। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি নাই, এই নাই, সেই নাই - আমি সবই জানি। এখন এটা তো আমি চেঞ্জ করতে পারবো না। এই বিশ্বকাপে যদি আমি এটাই টার্গেট করে যাই যে একটা সেঞ্চুরি করতে হবে বা খুব রান করতে হবে, তাহলে আমি আসলে অপ্রয়োজনীয় চাপ নিবো আমার উপরে। বরং দল আমাকে যে রোলটা দিবে, সেই রোলটা যদি আমি পালন করতে পারি, তাহলেই সুযোগ আসবে বড় ইনিংস খেলার। গুরুত্বপূর্ণ হবে দলকে একটা ভালো শুরু এনে দেয়া।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য উপহার৩০শে মে শুরু হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার আগেই ইংল্যান্ডে বসবে আরো একটি বিশ্বকাপের আসর। সেখানে অংশ নিবেন দশটি দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। ‘স্ট্রিট চাইল্ড ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৯’ নামে এই আসর মাঠে গড়াবে আগামী ৩রা মে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে খেলতে যাচ্ছে ক্ষুদে ৮ ক্রিকেটার। বরাবরের মত এবারও এই শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। দেশসেরা এই ওপেনার উপহার হিসেবে শিশুদের দিয়েছেন কেডস। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে সেই সময় তিনি শিশুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। কদিন আগেই তামিম নারী ক্রিকেট দলকে দিয়েছেন ৫টি ব্যাট। অধিনায়ক রুমানা আহমেদের ব্যাট চুরি যাওয়ার পর তিনি এই উপহার দেন।