× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলাদেশে ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

প্রথম পাতা

রুদ্র মিজান
২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার

নিউজিল্যান্ড থেকে শ্রীলঙ্কা। সন্ত্রাসী থাবায় ভেসে গেছে রক্তে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলা করে ৪৯ জনকে হত্যা করা হয়। শ্রীলঙ্কার গির্জা, হোটেলে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে হত্যা করা হয়েছে ৩২১ জনকে। মাত্র ৩৬ দিনের ব্যবধানে   
 এই দুটি ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। যা গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়। এভাবে হামলা ও হত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব হামলায় উগ্রবাদীরা অনুপ্রাণিত হতে পারে।
তারা নতুন করে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারে। সাধারণত জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নেয়। তারা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। অতীতে হামলার জন্য জঙ্গি সন্ত্রাসীরা বেছে নিয়েছিলো বাংলাদেশকে। নানা কারণেই হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও। তবে এই সময়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

দেশে জঙ্গি হুমকি না থাকলেও আমরা নিরাপদে আছি তা বলা যাবে না জানিয়ে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদল হক বলেন, আমরা নিরাপদে আছি সেটা বলার সুযোগ নেই। শান্তিপূর্ণ দেশে হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বের কোনো দেশ নিরাপদ রয়েছে তা বলা যাবে না। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরধার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শতভাগ সতর্ক থাকতে হবে।

সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সর্বত্র নিরাপত্তা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই সন্ত্রাসীরা কাউকে বাদ দিচ্ছে না। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সবাইকেই হত্যা করছে। তাই ওয়াজ মাহফিল থেকে শুরু করে কূটনৈতিক এলাকা সর্বত্রই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরধার করতে হবে বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক।
সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে জানিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) একে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, অতীতে হলি আর্টিজানের মতো ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের আর্মি, র‌্যাব  ও পুলিশ তা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। তারপর থেকে বড় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। এজন্য আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গি, সন্ত্রাসীরা যখন নিরব থাকে তখন তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে। আমাদের অসর্তকতার ফলে, ফাঁক ফোকর দিয়ে ঢুকে তারা নাশকতা চালায়। এজন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলাকে সন্ত্রাসীদের পাল্টা হামলা বা প্রতিশোধ বলেই মনে করছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে এটি পাল্টাপাল্টি হামলা। শ্রীলঙ্কার গীর্জা, হোটেলে ৩২১ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই শ্রীলঙ্কায় চার্চে ও হোটেল হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। মেজর জেনারেল (অব.) একে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আইএস সারা বিশ্বে এখন কোনঠাসা। তারা নিজেদের শক্তি জানান দিতে, যে তারা শেষ হয়ে যায়নি এবং নিউজিল্যান্ডে মসজিদের হামলার প্রতিশোধ নিতে এই ভয়াবহ হামলা করতে পারে। তারা যে কোনো দেশেই এ ধরণের নাশকতা চালাতে পারে। তাই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক এই সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য দেশের সহযোগিতা নিতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ রয়েছে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংক্রান্ত সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। এসব তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
জঙ্গি সন্ত্রাসীদের কাছে কোনো দেশই নিরাপদ না জানিয়ে সাবেক এডিশনাল আইজিপি মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, সুইসাইডাল এ্যাটাক মোকাবেলা করা খুব কঠিন। সরাসরি এ্যাকশনে গেলে আমাদের বাহিনী তা মোকাবেলায় যথেষ্ট শক্তিশালী। শ্রীলঙ্কায় যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে ধারণা করছি, সেখানে সন্ত্রাসীদের সুসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা অংশ নিয়েছিলো।

তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। বিশেষ করে বিমানবন্দর, কূটনৈতিক এলাকা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। তল্লাশিতে কড়াকড়ি করতে হবে। বিমানবন্দরে তল্লাশি নিয়ে অনেকে বিরুপ মন্তব্য করেন। কিন্তু এটা উচিত না। মনে রাখতে হবে এটা ভাইটাল ইস্যু। বিরুপ মন্তব্য না করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা উচিত। একইভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কাউকে অযথা হয়রানি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে বোমা বিস্ফোরণ হলে মুহূর্তের মধ্যেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। সেইসঙ্গে দেশের প্রতি চরম নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। একইভাবে কূটনৈতিক এলাকাও গুরুত্বপূর্ণ। ওই এলাকায় অচেনা কাউকে দেখলেই তাকে ডেকে নিয়ে সেখানে অবস্থানের কারণ ও পরিচয় জানা উচিত। এতে সন্ত্রাসীরা নাশকতা চালানোর দুঃসাহস পাবে না।

সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বলেন, আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের অনেককিছুই অরক্ষিত। এখানে একটা শ্রেণির আইন মানার প্রবণতা খুম কম। রয়েছে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিও। উদহারণ হিসেবে বলা যায়, কিছু আগেও অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। একটা শ্রেণির মধ্যে এক ধরণের সামন্তবাদি মানসিকতা কাজ করে। তারা মন্ত্রী, এমপিদের ঘনিষ্টজন। তাদের কোনো চেকিং করার দরকার হয় না। তাদের আইন মানতে হয় না। এটা কোনো সরকারের বিষয় না। এটা সমাজে  ইনফরমাললি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অপরাধ বিষয়ক বিজ্ঞানী জিয়া রহমান বলেন, আমাদের বাহিনীগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তারা কতটা দক্ষ, একইভাবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা আগাম তথ্য দিতে পারছে কি-না?  একটা ঘটনার পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেকটা ঘটনা ঘটার আগেই তথ্য সংগ্রহ করে তা মোকাবেলা করা প্রয়োজন। যদিও অনেকক্ষেত্রে তারা ভালো করছে। জিয়া রহমান বলেন,  আমাদের আইন না মানার প্রবণতা ছাড়াও সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা খুব ভালো না। একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটলে  সবাই যে ঐক্যবদ্ধ হবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলবে সেই অবস্থাও দেখতে পাচ্ছি না। এসব বিবেচনায় আমাদের ঝুঁকি অনেক। এই সময়ে সতর্কতার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর