সাটুরিয়ায় এক ঋণগ্রহীতাকে সারাদিন একটি কক্ষে আটকিয়ে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এনজিও আম্বালা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে। বুধবার সাটুরিয়া শাখায় এ ঘটনা ঘটায় এনজিও’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরে পুলিশ ঋণগ্রহীতাকে উদ্ধার করে ওই ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, সাটুরিয়া আম্বালা ফাউন্ডেশন থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বরের ২৭ তারিখে বরাইদ ইউনিয়নের মো. নজরুল ইসলাম ২ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বুধবার সে অফিসে গেলে সাটুরিয়া শাখার ম্যানেজার মারুফ ও এরিয়া ম্যানেজার কামরুজ্জামান মৃধা তাকে অফিসে আটকিয়ে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। ঋণগ্রহীতার ব্যাগে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ওই এনজিও’র কর্মকর্তারা।
ঋণগৃহীতা মো. নজরুল ইসলাম জানান, দুই বছর মেয়াদি ২ লাখ টাকা নেয় এ এনজিও থেকে। মাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। পারিবারিক সমস্যার কারণে কিছুদিন কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনি। বাকি কিস্তি জমি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যে জমি বিক্রি করবো সে জমির দলিলপত্র ওই এনজিও’র কাছে জমা রয়েছে। বুধবার দলিলের খারিজের কপি আনতে গেলে আমাকে ওই এনজিও’র কর্মকর্তা ম্যানেজার মারুফ, এরিয়া ম্যানেজার কামরুজ্জামান মৃধা এবং কর্মচারী সাগর এক রুমে আটকিয়ে মারধর করে আমার ব্যাগে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয় লোকজন অফিসে এলে তাদের ঘটনাটি বলি। এরপর স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিয়ে আমাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় মো. শাহীন জানায়, এ এনজিও থেকে ঋণ নিতে হলে তিনশত টাকার স্ট্যাম্প, ব্ল্যাংক চেক ৪টি, জামিনদারের ৪টি চেক, জমির দলিল ও খারিজের কপি দিয়ে ঋণ দেন এ শাখার ব্যবস্থাপক মারুফ। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে ঋণগ্রহীতাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এরিয়া ম্যানেজার কামরুজ্জামান মৃধা।
এরিয়া ম্যানেজার কামরুজ্জামান মৃধা বলেন, অভিযোগকারীর অভিযোগ সত্য নয়। তাকে কোনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। তার কাছে টাকা পাব সে টাকার জন্য তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান।
আম্বালার ফাউন্ডেশনের সাটুরিয়া শাখার ম্যানেজার মারুফ বলেন, ঋণগ্রহীতা নজরুলের কাছে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা পাওনা। সে টাকা চাইতে গেলে সে টাকা পরিশোধ করেনি। যে কারণে টাকা পাওয়ার জন্য তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তবে তাকে শারীরিক নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে আম্বালা ফাউন্ডেশনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস ভর্তি পণ্য ফ্রিজ। ওই ফ্রিজ পণ্য কি করেন জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, নগদ টাকায় বিক্রি করা হয়। কার কাছে বিক্রি করা হয় জানতে চাইলে সে বলে ঋণগ্রহীতার কাছে বিক্রি করা হয়। পণ্য বিক্রি করার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বলেন অনুমতি আছে। অনুমতি কে দিয়েছে জানতে চাইলে সে কোনো নথিপত্র দেখাতে পারেনি।
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিয়ার রহমান জানান, আম্বালা ফাউন্ডেশনের দুই কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদেরকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।