× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা / শামীম রিমান্ডে, রুহুল আমিন কারাগারে ওসি’র বিরুদ্ধে তদন্ত

দেশ বিদেশ

ফেনী প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার

সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যায় সরাসরি জড়িত শাহাদাত হোসেন শামীমের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) জাকির হোসাইনের আদালতে (আমলি আদালত, সোনাগাজী) তুলে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানী। এর আগে গত ১৪ই এপ্রিল আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলো বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই’র পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, ‘আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম ইতিপূর্বে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলো সেগুলো যাচাই করার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেছেন। সেজন্য তাকে আদালতে তুলে আবেদন করলে আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন’।  
অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত শাহাদাত হোসেন শামীমকে গত ১২ই এপ্রিল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে গ্রেপ্তার করেছিলো পিবিআই।
এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি (সদ্য বাতিলকৃত) মো. রুহুল আমিনের ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানী জানান, রিমান্ড শেষে গতকাল ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) জাকির হোসাইনের আদালতে (আমলি আদালত, সোনাগাজী)  তোলা হয় রুহুল আমিনকে। পরে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
গত ২০শে এপ্রিল থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে ছিল রুহুল আমিন। এর আগে ১৯শে এপ্রিল রুহুল আমিনকে সোনাগাজীর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছিলো পিবিআই।
‘জামাই আদরে’ রুহুল আমিন: এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী বলেন, আসামি রুহুল আমিনকে রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুর আড়াইটার সময় আদালত হাজতখানায় আনা হয়। তবে তাকে হাজতখানায় না রেখে ‘জামাই আদরে’ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানীর নিজ বাসার কক্ষে আসামি রুহুল আমিনকে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। একঘণ্টা পর তাকে গোলাম জিলানীর কক্ষ থেকে বের করে আদালতে না তোলে ‘অনেকটা সম্মানের সঙ্গে’ পিবিআই’র গাড়িতে তুলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়ে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে আসামিকে পিবিআই’র গাড়িতে তোলার সময় উপস্থিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই’র পরিদর্শক মো. শাহ আলমের কাছে রুহুল আমিনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান এ বিষয়টি আপনাদেরকে (সংবাদকর্মীদের) জানাবেন’। পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘আমি তো আদালতে ছিলাম না, আপনারা এ বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলমের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন’।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, ‘বৃহস্পতিবার আসামি রুহুল আমিনকে আদালতের হাজতখানায় আনলেও রিমান্ডের নথি (কাগজপত্র) কোর্ট পুলিশ আদালতের বিচারকের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আসায় আসামিকে এজলাসে তোলার প্রয়োজন পড়েনি। তবে আদালতে সকল আসামিই সমান, আদালতে কারো রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করা ঠিক না’। এর আগে গত ২০শে এপ্রিল রুহুল আমিনকে ফেনী জজ আদালতের সামনের ফটক (মেইন গেইট) দিয়ে না তোলে পিবিআই’র কর্মকর্তারা পেছনের ফটক (গেইট) দিয়ে আদালতে তোলে। পরে রিমান্ড শুনানি শেষে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে সাংবাদিকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুপিসারে পেছনের ফটক (গেইট) দিয়ে তাকে পিবিআই’র কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মামলার অন্যতম আসামি রুহুল আমিনকে এমনভাবে ‘জামাই আদর’ করাটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীরা। এ বিষয়টির সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যাও দেয়নি পিবিআই’র কোনো কর্মকর্তা। তবে আদালতে উপস্থিত অনেকেই বলেছেন, ‘সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাকে ‘‘জামাই আদরে’’ রাখা হচ্ছে’।
নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন অব্যাহত: নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সকালে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়ন ও মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে। ফেনী মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় ‘সানিডেল প্রিপারেটরি হাইস্কুল’র শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে মহাসড়কে মানববন্ধন করে। একই সময়ে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী বাজার এলাকায় ‘শর্শদী হাইস্কুল’, ‘শর্শদী গার্লস হাইস্কুল’, ‘আলহাজ জামেয়া ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা’র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা খুনি অধ্যক্ষ সিরাজ- উদ-দৌলাসহ সকল আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে।
মানববন্ধনে শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, স্কুলের দাতা সদস্য ডা. তবারক উল্যাহ চৌধুরী বায়েজীদ, শর্শদী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাফর উল্যাহসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের মামলা তদন্তে সোনাগাজীতে পিবিআই: নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা তদন্তে সোনাগাজীতে এসেছে তদন্ত দল।
ফেনী পিবিআই কার্যালয়ে বুধবার রাত ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা জানান, তার নেতৃত্বে একটি দল সোনাগাজীতে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। উচ্চ আদালতের সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ব্যারিস্টার ছায়েদুল হক সুমনের দায়ের করা মামলার তদন্তের প্রথম দিন সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) করিমুল হকের মতামত গ্রহণ করেন। সোনাগাজীতে তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা বুধবার থানার কার্যক্রম শেষ করেছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে’। এর আগে গত ২৭শে মার্চ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে সেখানে ওসি তার মোবাইলে নুসরাতকে ধমক দিয়ে ভিডিওধারণ করেন। ৬ই এপ্রিল নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করার পর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নুসরাতের মৃত্যুর পর এই ঘটনায় উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন ব্যারিস্টার ছায়েদুল হক সুমন। ওই মামলা তদন্তের স্বার্থে ওসি মোয়াজ্জেমের ব্যবহৃত দুটি ফোন ইতিমধ্যে জব্দ করে পিবিআই।
ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরের দায়ের করা রিটের শুনানি আগামী সপ্তাহে: সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকা হাইকোর্টে রিট করেছিলেন ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মনির আহম্মেদ বাচ্চু। ফেনী মডেল থানায় আটক রেখে ৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে হাইকোর্টে রিট করেন মনির। মোয়াজ্জেম হোসেন ২০১৩ সালের ২রা মার্চ ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদানের পর এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। রিটের পর ওসি মোয়াজ্জেম ক্ষিপ্ত হয়ে একে একে ১১টি মামলা দায়ের করেন কাউন্সিলর মনির আহম্মদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে। কাউন্সিলর মনির আহম্মদ বাচ্চু ১১ মামলার বোঝা নিয়ে দীর্ঘ কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসেন। জামিনে আসার পর ওসি মোয়াজ্জেমের অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকির মুখে ফেনী ছেড়ে পালিয়ে যান কাউন্সিলর মনির আহম্মদ বাচ্চু।
ওসি মোয়াজ্জেমের হুমকি থেকে বাঁচতে ২০১৩ সালের ২২শে মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি ঢাকা, ডিআইজি চট্টগ্রাম, ফেনী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত আবেদন করেন।
২০১৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন যার নং-৬৬৬২/২০১৩। ওসি মোয়াজ্জেমকে দুর্নীতির কারণে ২০১৩ সালের ২০শে ডিসেম্বর ছাগলনাইয়া থানায় বদলি করা হয়। বদলি হওয়ার পরও ওসির হুমকি ধামকি আরো বেড়ে যায়। ওসির অব্যাহত ক্রসফায়ারের ভয়ে আদালতে রিটের শুনানি করতে পারেননি মনির। মামলা ও ওসির হয়রানির কারণে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মনির। তবে সে মামলাটিও আগামী সপ্তাহে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী পৌরসভার ১৫ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মনির আহম্মেদ বাচ্চু। উচ্চ আদালতে তার পক্ষে মামলা লড়ছেন আইনজীবী ইউনুস আলী আখন্দ। গত ৬ই এপ্রিল সকালে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবি পরীক্ষা প্রথমপত্র দিতে মাদরাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদরাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর গত ১০ই এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ই এপ্রিল বিকালে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ই এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত ৫ জনসহ ৮ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর