ইতিমধ্যেই তিনি সাতবার পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসেছেন। তবে চতুর্থ দফার ভোটের দিন পশ্চিমবঙ্গের দুটি কেন্দ্রে প্রচারে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে পদ্ম ফোটাতে তৃণমূল কংগ্রেস দলে ভাঙনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। পদ্ম হল বিজেপির প্রতীক। এদিন তিনি তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কদের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। শ্রীরামপুরের সভায় মমতাকে উদ্দেশ্য করে মোদী বলেছেন, দিদি, ২৩ তারিখ (মে) ফল বেরোতে দিন, দেখবেন চারদিকে শুধুই পদ্ম ফুটেছে। আপনার বিধায়করাও তখন বিজেপিতে চলে আসবেন। এখনও আমার সঙ্গে ৪০ জন বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন।
মোদীর এই বিস্ফোরক দাবির পরই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল তৈরি হয়েছে।
এর আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সাংসদ অনুপম হাজরা, দুই বিধায়ক সৌমিত্র খান ও অর্জুন সিংহ। এরা সকলেই এবার বিজেপির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তবে মোদীর এই বিস্ফোরক দাবির কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মোদীর বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনেও নালিশ জানাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন মোদীর ভাষণের কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটে মোদীর দাবি উড়িয়ে দিয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েন লিখেছেন, এক্সপায়ারি বাবু প্রধানমন্ত্রী, এটা খোলাখুলি বলে দিচ্ছি, আপনার সঙ্গে কেউ যাবে না। এমনকি, একজন কাউন্সিলরও নয়। আপনি কি ভোটের প্রচার করছেন, নাকি ঘোড়া কেনাবেচা? এ বছরের লোকসভা নির্বাচনের শুরু থেকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে টার্গেট করে রাজ্য থেকে বেশ কিছু আসনে জয়ের জন্য জোরদার প্রচার করেছেন মোদী ও অমিত শাহ জুটি। এবার ভোটেও মোদী-অমিত শাহ জুটি রাজ্যে বেআইনী অর্থলগ্নী সংস্থার কেলেঙ্কারিকে অন্যতম ইস্যু করে প্রচার চালিয়েছেন। সোমবারও মোদী এই ইস্যুতে বলছেন, রাজ্যের সঙ্গে, রাজ্যের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। তার বদলা নিয়েই ছাড়বেন এ রাজ্যের যুব সমাজ।
এদিকে মোদীকে মমতার উপহার পাঠানো নিয়ে মমতা প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় বলেছেন, রাজ্যে অতিথি এলে আমরা রসগোল্লা খাওয়াই, কিন্তু ভোট চাইলে দেব না। সম্প্রতি মমতা কাঁকড় মেশানো মাটির রসগোল্লা মোদীকে পাঠানোর কথা বলেছেন। মমতার সেই কটাক্ষই বাংলার মনীষীদের সঙ্গে জুড়ে মোদী বলেছেন, দিদি বলেছেন আমাকে বাংলার মাটির রসগোল্লা খাওয়াবেন। দিদি আমার ভাগ্য খুলে যাবে। যে মাটিতে রামকৃষ্ণ পরমহংস জন্মেছিলেন, যে মাটিতে স্বামী বিবেকানন্দ জন্মেছিলেন, যে মাটিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জন্মেছিলেন, সে মাটি আমার কাছে প্রেরণা। দিদি আমি বাংলার মাটির রসগোল্লার অপেক্ষায় থাকব।
তবে মোদী সোমবারই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। এদিন তিনি শ্রীরামপুর ও ভাটপাড়ায় দুটি সভা করেছেন। এ দিনের প্রচারে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে সিন্ডিকেট, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা সহ প্রায় সব ইস্যুতেই মমতাকে আক্রমণ করেছেন মোদী। সেইসঙ্গে মমতার দিল্লিতে সরকার গড়ার ঘোষণাকে কটাক্ষ করে মোদী বলেছেন, ভাইপোকে রাজ্যপাটে বসাতে মমতা প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখছেন। অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোদীকে চড়া সুরে আক্রমণ করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যেবাদী, দাঙ্গাবাজ আখ্যা দিতেও ছাড়েন নি মমতা। সোমবার এক জনসভায় মমতা বলেছেন, একটা মিথ্যেবাদী প্রধানমন্ত্রী, যার প্রধানমন্ত্রী হবার যোগ্যতা নেই। এমন অহংকারী দাঙ্গাবাজ প্রধানমন্ত্রী আগে কখনো দেখিনি। মমতা এদিন প্রচারে মোদী-শাহ জুটিকে আক্রমণ করেছেন।