× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মায়ের কাছে খোলা চিঠি

ষোলো আনা

ইমরান আলী
১২ মে ২০১৯, রবিবার

মা
কখন আমার স্কুল ছুটি হবে তা তোমার মাথায় থাকতো। ছুটি শেষে বাড়ি ফিরে যদি তোমাকে না পাই হাঙ্গামা লাগিয়ে দিবো- এটা ছিল তোমার প্রতিদিনের আশঙ্কা। তাই বাড়ি ফিরেই তোমাকে দেখতে পেতাম গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে।

গামছা নয়, কোন টিস্যু নয়। মুখ মুছে দিতো পরনের শাড়ির আঁচল দিয়ে। বিরক্ত হতাম। গ্রামের নারীতো তুমি। বাড়ির বাইরে যেতে মানা। সেবার শরীর জুড়ে হাম হলো।
হাম হলে বড় জোর সাতদিন থাকে। ভালো হয়ে যায় আপনা-আপনি। কিন্তু তুমি কি করলে! বাতেনের বাড়িতে গিয়ে নিমের পাতা আনলে। চার মাইল দূরের বাজার হতে তেতো করলা কিনে আনলে। ছেলে খাবে।

নিম সেদ্ধ পাতায় গোসল করবে। হাম ভালো হবে। কুসংস্কার বিশ্বাস করতে না তুমি। কিন্তু ছেলের চেহারার দিকে তাকিয়ে এক  মুন্সীকে ডেকে এনে পানি পড়া খাইয়ে দিলে।

সব মা-ই হয়তো তাই। কুসংস্কার বিশ্বাস না করলেও ছেলের ভালোর জন্য দিনকে রাত বলতে বললেও চিৎকার দিয়ে বলবে- হ ঠিকই আছে। গলায় পরিয়ে দিলে লাল সুতো। ছেলের হাম তবু দ্রুত ভালো হোক। তুমি যে মা।

এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেলাম না। রেজাল্ট মারাত্মক খারাপ। মেজো আপার সে কী রাগ! স্যারদের বকুনি। কিন্তু তুমি ওই রেজাল্টেই খুশি। অনেকদিন ভালো খাবার খাওয়া হয়নি। দুকুনির মা’র কাছ থেকে ডিম আনলে। গরুর দুধ আনলে। সে দুধে পানি না দিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করলে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে। আমি খেলাম। আমার চোখে পানি নেই। তোমার চোখ তখন ছলছল। ছেলে এসএসসি পাস করেছে। বড় হচ্ছে। ভালো জামা-কাপড় দরকার। কতই না চিন্তা তোমার মাথায়। দিন যেতে থাকে।

আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো হলো একটু একটু করে। চলে গেলাম এক শহর থেকে আরেক শহরে। থাকতে চেয়েছিলাম নিজের শহরেই। কিন্তু তুমি থাকতে দিলে না। যত টাকা লাগে লাগুক। ছেলে বড় কলেজে পড়ুক। যেদিন বাড়ি থেকে বের হলাম তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলাম। কী দরকার ছিল বাইরের কলেজে পড়ার... নিজ শহরেইতো কত ভালো কলেজ ছিল। তুমি মুখ বুজে বিদায় দিলে। পরে শুনেছিলাম। তিন দিন তুমি পানি ছাড়া কিছুই খাওনি। সারাক্ষণ কেঁদেছ।

এমন সব পর্ব দিয়েই কেটে গেছে ১৬টি বছর। অনেক স্মৃতি। বাইরে থাকি। বড় শখ হয় উপার্জনের টাকায় বড় একটা ইলিশ কিনে তোমাকে পাশে বসিয়ে খাওয়াই। সময়ের অভাবে সে সুযোগ আমার হয় না। প্রায় রাতে একাকী খেতে বসি। বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে।

একটু আসো না মা! আমার সঙ্গে খেতে বস... ইলিশের কোনো স্বাদ পাই না। চোখ বন্ধ করে কোনোরকম ক্ষুধা মেটাই। তোমার হাতের গরুর মাংস রান্না আজো জিহ্বায় লেগে আছে। ৫ সদস্যর পরিবারের হাফ কেজি মাংসের চল্লিশ টুকরো করতে। অর্ধেকের বেশি আসতো আমার প্লেটে...

না আমি আজ আর লিখতে পারছি না... প্রচণ্ড মাথাব্যথা। বাইরেই ছিলাম সারা দিন কম বেশি। বিরক্ত লাগছে সবকিছুকে। অনেক কিছুই মেকি, অনেক কিছুই ফাঁকি। শুধু মায়ের মধ্যে কোনো ফাঁকি নেই।

-ইতি
তোমার ছেলে
................
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর