× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বোনকে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করলো ভাই

দেশ বিদেশ

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
১৮ মে ২০১৯, শনিবার

বড় ভাই তাজুল ইসলাম (২৪)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোট বোন লুৎফা আক্তার (১৭) সরাইল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পিতা কালাম মিয়া ও মাতা সুজেদা খাতুন। সরাইল সদর ইউনিয়নের গুনারা গ্রামের বাসিন্দা। গত সপ্তাহ দিন আগে সরাইল কাচারি পাড়ার জনৈক প্রবাসী ছেলের (৩০) সঙ্গে লুৎফার বিয়ের আয়োজন করেছিলেন মা-বাবা। বিয়েতে সম্মত ছিলেন না লুৎফা। ভয় ও লজ্জায় মুখ খুলতে পারছিলেন না।
ত্রাণকর্তা হিসেবে লুৎফার পাশে দাঁড়ালেন বড়ভাই তাজুল। তাজুল ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অংশীদারিত্বে ব্রিটিশ কাউন্সিল পিফোরডি প্রকল্পের বাস্তবায়নে উপলব্ধি সংগঠনের ম্যাপ সদস্য। এ প্রকল্পে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ে কাজ করছে তাজুল। বিবাহে বাধা দিয়ে বসলেন তিনি। কিন্তু তার মা বাবাসহ সব স্বজনরা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন তাজুলের ওপর। বিন্দু পরিমাণ পিছু হটেন নি তাজুল। সঙ্গে যোগ দিলেন লুৎফা আক্তারও। বাদ এশা হবে বিয়ে। াজগোজসহ সব আয়োজন সম্পন্ন। প্রস্তুত কনে পক্ষ। বর পক্ষও পিছিয়ে নেই। সময়ও বেশি নেই। বোন লুৎফাকে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষার জন্য চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করলেন তাজুল। কোথায় যাবেন? কার কাছে বলবেন? ভেবে পাচ্ছিলেন না। ইউএনও স্যারের কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছিলেন। মাথায় চিন্তা একটাই যে করেই হোক বোনকে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করতেই হবে। অবশেষে ছুটে গেলেন পিফোরডি প্রকল্পের সরাইলের কর্মকর্তাদের কাছে। উপলব্ধিসহ কয়েকজন এগিয়ে আসলেন। বিবাহে বাধা দিলেন। তাদেরকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝালেন। বিয়ে থেকে সরে দাঁড়ালেন লুৎফার মা-বাবা।
 কিন্তু তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হলেন ছেলে তাজুল ও মেয়ে লুৎফার ওপর। এ ঘটনায় তাদের পরিবারে অশান্তি বইতে থাকলো। একাধারে চার দিন রান্না  হয়নি। বন্ধ ছিল খাওয়া দাওয়াও। কিন্তু এ বাল্যবিবাহ ভাঙতে পেরে দারুণ উজ্জীবিত তাজুল। সেই সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন লুৎফা। তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা চার ভাই সাত বোন। আমি ও লুৎফা পড়ছি। ছোট ভাই নাদিরুলই কাজ করে। সংসার চালায়। বোনটা পড়া লেখা শেষ করে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরই বিবাহ দেব এমনটাই আমাদের ভাবনা। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লুৎফাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আমার মা-বাবা। মা সাজেদা বেগম বিবাহ দিয়ে ঘর খালি করতে খুবই ব্যস্ত। বাল্যবিবাহ ভেঙে দেয়ায় মা-বাবা দু’জনই আমাকে বোনের লালন পালনের দায়িত্ব নিতে চাপ দিচ্ছেন। কামাই রুজি করতেও বলছেন। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দিচ্ছেন। তারা বলছেন, আমি না কি খুবই বেশি বুঝি। আমার কপালে দুঃখ আছে। পেটে ভাত যাবে না। ইত্যাদি নানা কথা বলছেন তারা। আমি তৃপ্ত ও খুশি। কারণ আমাদের অধিকাংশ আত্মীয় স্বজনের বাল্যবিবাহ হয়েছে। এরপর তাদের অসুস্থতা, অপমৃত্যু, ডিভোর্সসহ পারিবারিক সমস্যার অন্ত নেই। আমি আর এমন চিত্র দেখতে চাই না। আর আমি এখন পিফোরডি প্রকল্পে কাজ করে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানছি। আমি স্বার্থক। কলেজছাত্রী লুৎফা আক্তার বলেন, আমি কখনো বাল্যবিবাহ পছন্দ করি না। আমি এ বিবাহে রাজি ছিলাম না। আমার মা নিরক্ষর ও সোজা। যে যেভাবে বোঝায়। সেভাবেই বুঝে ফেলে। বাবাও মায়ের কথা শোনেন। বিবাহের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর আমি খুই টেনশনে ছিলাম। আমার বড়ভাই আমাকে রক্ষা করেছেন। জীবন বাঁচিয়েছেন। কারণ আমি জানি বাল্যবিবাহ অকাল মৃত্যু ঘটায়। সন্তান বিকলাঙ্গ হয়। সংসারে অশান্তি বিরাজ করে। রোগ শোক বৃদ্ধি পায়। আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। এসব কারণে কোনো সময়ই আমি বাল্যবিবাহ চাইনি। আমি পড়ালেখা শেষ করে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরই বিয়ে করব। স্থানীয় লোকজন জানান, লুৎফার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর একই পাত্রের সঙ্গে গোপনে সরাইল সদর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক ছাত্রীর বিয়ে হয়। ওই কিশোরী লুৎফাদের নিকটাত্মীয়। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম মোসা বলেন, তাজুল ইসলামের মতো আমাদের সমাজের প্রত্যেকটি সচেতন লোক দায়িত্ব নিয়ে এভাবে এগিয়ে আসলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাজুল ও লুৎফা দুজনকেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর