সব ধর্মের মানুষের প্রতি সমান আচরণ করার কথা বলা হলেও ভারতে বৈষম্যের শিকার মুসলিমরা। এবারের নির্বাচনে বিজেপির ম্যানিফেস্টোর অন্যতম পয়েন্ট ছিল, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী কথিত সব বাংলাদেশী অভিবাসী থেকে দেশকে মুক্ত করা হবে। তবে এক্ষেত্রে তারা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, পারসি ও জৈন সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছে। বলেছে, এসব সম্প্রদায়ের কোনো বাংলাদেশী অবৈধ উপায়ে ভারতে থাকলে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। কিন্তু ব্যতিক্রমভাবে এই সাধারণ ক্ষমার বাইরে রাখা হয় মুসলিমদের। অর্থাৎ অন্য সম্প্রদায় ভারতে থাকতে পারলেও বাংলাদেশী কোনো মুসলিম সেখানে নাগরিকত্ব পাবেন না। আর এ উদ্দেশ্যেই আসামে সম্পন্ন হয়েছে এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি। এর উদ্দেশ্য, সেখানে বসবাসকারী (তাদের ভাষায় অবৈধ বাংলাদেশী) মুসলিমদের বের করে দেয়া হবে।
নির্বাচনী প্রচারণায় এসব কথিত অভিবাসীদেরকে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ‘উইপোকা’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
অনলাইন বিবিসিতে রাজিনি বিদ্যানাথান লিখেছেন, আসামের গোয়ালপাড়ায় একটি গ্রামে একদল মানুষ প্লাস্টিকের চেয়ারে গোল হয়ে বসেছিলেন। তাদের অনেকের হাতে পেপার। তাতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ছবি। গত বছর রাজ্যজুড়ে মানুষদের বলা হয় তাদের পারিবারিক ভিত্তি ও তারা যে ভারতীয় এ বিষয়ে প্রমাণ হাজির করতে। এক্ষেত্রে তাদেরকে সময় বেঁধে দেয়া হয়। বলা হয়, যারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে প্রবেশ করেছেন তা তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে।
চার সন্তানের মা উফান। তিনি একটা কাগজের ভাজ খুললেন। এর ওপরে একটি ছবি। এটি তার স্বামীর ছবি। তিনি মারা গেছেন গত বছর। নিচে তার ছোট ছেলেদের ছবি। তার পরিবারের জন্ম ভারতে। কিন্তু তারা কেউই সরকারের নাগরিকপঞ্জিতে নাম নিশ্চিত করাতে পারেন নি। শুধু তারাই নন। ৪০ লাখ অধিবাসী এই তালিকার বাইরে রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই মুসলিম। তাই উফানের মধ্যে আতঙ্ক তাকে যেকোনো সময় দেশ থেকে বের করে দেয়া হতে পারে।
একই রকম পরিণতির মুখে আছেন মোহাম্মদ সামছুল। তিনি বলেছেন, তার পিতা, পিতামহের জন্ম আসামে। তাদের নাম আছে রেজিস্টারে। সামছুলের কাছে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট থাকা সত্ত্বেও তার নামটি তিনি এনআরসিতে নিবন্ধিত করাতে পারেন নি। তিনি বলেন, আমরা অব্যাহতভাবে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। আমাদের ভয়, রাতে পুলিশ আসবে। তারপর পুরো পরিবারকে কোনো শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বিজেপি শুধু অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের মূল লক্ষ্য স্থির করেছে। কিন্তু এই প্রচারণাকে ব্যবহার করা হবে যেকোনো মুসলিমের বিরুদ্ধে।