আমাদের দেশে মোবাইল ফোনের টাওয়ার সহ নেটওয়ার্কিং-এ যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, তার ৯০ শতাংশই হুয়াওয়ের। শুধু আমাদের দেশ নয়, পৃথিবীর ১৭০টি দেশে নেটওয়ার্কিংয়ের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হুয়াওয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ৫০টি টেলিকম অপারেটরের মধ্যে ৪৫টিই ব্যবহার করে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি। শুধু ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ কোনো না কোনো ভাবে হুয়াওয়ের ভোক্তা। এই সংখ্যাটা পরবর্তীতে আরো বেড়েছে, কমেনি।
হুয়াওয়ে হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক। এই ব্যবসায় তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায় আরেক চীনা কোম্পানী জেডটিই’কে। যারা হুয়াওয়ের জিনিস কেনে না, তারা জেডটিই থেকে কেনে।
হুয়াওয়ে আবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিভিশন চিপ নির্মাতা কোম্পানী। প্রথম ৫জি টিভি আনার ঘোষণা দিয়ে তারা স্যামসাং ও অ্যাপলের টিভি ব্যবসাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।
একই সঙ্গে এই টিভিতে থাকছে ৮কে রেজ্যুলেশন ও ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ। যা দিয়ে দর্শক যেকোনো দিক থেকে টিভি দেখতে পারবে। বলাই বাহুল্য, হুয়াওয়ে পৃথিবীর প্রথম কোম্পানী হিসেবে সফলভাবে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। হুয়াওয়ের নেটওয়ার্কিং ও ইলেক্ট্রনিকস ছাড়াও আমরা যেভাবে হুয়াওয়েকে চিনি, সেটা হচ্ছে মোবাইল বা স্মার্টফোন দিয়ে।
২০১৮ সালে অ্যাপলকে পেছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে হুয়াওয়ে। প্রথম অবস্থানে আছে স্যামসাং। গবেষকরা বলছেন ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগেই স্যামসাংকে পেছনে ফেলে শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা হবে হুয়াওয়ে। যদিও সেই অগ্রযাত্রা এখন হোঁচট খেয়েছে। সেটাতে পরে আসছি।
ভাঁজ করা যায় এমন স্মার্টফোন প্রথম যে দু’টি কোম্পানী এনেছে, তারা হচ্ছে যথাক্রমে স্যামসাং ও হুয়াওয়ে। এই দুটি কোম্পানী ফোল্ডেবল স্মার্টফোন আনার জন্য গবেষণা চালাচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে।
কিন্তু তাড়াহুড়ো করে হুয়াওয়ের এক সপ্তাহ আগে এই ফোন রিলিজ করে স্যামসাং। কিন্তু স্যামসাং-এর ফোনে এত ত্রুটি পাওয়া যায় যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ফোনটি বাজার থেকে তুলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। দুই কোম্পানির ভাঁজ করা ফোনের মধ্যে হুয়াওয়েরটাই উন্নত।
মোবাইল ফোনের গবেষণা ও উন্নয়ন (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) খাতে হুয়াওয়ের অন্য যেকোনো কোম্পানীর চেয়ে বেশী বিনিয়োগ করে। ২০১৮ সালে তারা এই খাতে বাজেটের দিক দিয়ে স্যামসাংকে ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮ সালে স্যামসাং এই খাতে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়।
অন্যান্য প্রযুক্তি বা পণ্যের গবেষণা ও উন্নয়ন খাতেও সবচেয়ে বেশি ব্যয় স্যামসাং ও হুয়াওয়ের। আগে এই দিক থেকে শীর্ষে ছিল অ্যাপল ও স্যামসাং। তারা যথাক্রমে ১১০০ কোটি ও ১৩০০ কোটি ডলার এই খাতে বার্ষিক ব্যয় করতো। কিন্তু হুয়াওয়ে গবেষণা ও বিনিয়োগে ২০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে শীর্ষে চলে যায়।
চীনা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অনেক কিছুতেই স্যামসাং ও অ্যাপলের তুলনায় হুয়াওয়ের ব্যয় কম। স্মার্টফোন, টিভি ও নেটওয়ার্কিং- এসব ব্যবসায় হুয়াওয়ের রীতিমতো আধিপত্য। হুয়াওয়ের বিশেষ দু’টি বৈশিষ্ট আছে। ক. তাদের পণ্যের গুণগত মান। খ. সস্তা মূল্য।
এবার আসা যাক মোবাইল ফোন ব্যবসায়। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো অ্যাপল ও স্যামসাং-এর। কিন্তু হুট করে গত কয়েক বছরে বড় খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে ঢুকে পড়ে হুয়াওয়ে। গত বছর ফোন বিক্রির সংখ্যার দিক থেকে স্যামসাং-এর পর দ্বিতীয় অবস্থানে আসে হুয়াওয়ে। এর ফলে ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো এই তালিকার প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থান থেকে ছিটকে পড়ে অ্যাপল।
স্যামসাং যদিও আমেরিকান কোম্পানি নয়, তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে তারা সেরকমই সমাদর পায়। এর কারণ হলো দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশগুলোর একটি। এটি যেন আমেরিকার অনানুষ্ঠানিক অঙ্গরাজ্য। এখনই তেড়ে আসার দরকার নেই। এই বক্তব্যের পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। দক্ষিণ কোরিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাষ্ট্র, যার সুরক্ষার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রায় ৩৩ হাজার সৈন্য রয়েছে। তারা সবকিছুই করে যৌথভাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ও পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খুবই বেশি। মোটাদাগে যুক্তরাষ্ট্র একাধারে দক্ষিণ কোরিয়ার উপদেষ্টা ও অভিভাবকের মতো। খ্রিষ্টান-প্রধান দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নানা ধরণের সমর্থন পায় প্রায় সবকিছুতে।
এ কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে সেগুলো যদি হয় টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত, তাহলে তো উদ্বেগ আরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত বিশ্বজুড়ে সকলের ওপর নজরদারি চালায়। এমনকি নিজের মিত্ররাষ্ট্রকেও ছাড় দেয় না দেশটি, যেটা এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথি থেকে ¯পষ্ট হয়েছে। আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন, কীভাবে চিন্তা করেন, কার সঙ্গে প্রেম করেন, কোথায় যান, কোথায় ঘুমান- সবই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নখদর্পনে। অ্যান্ড্রয়েড, গুগল ও ফেসবুকের কারণে একজন ব্যক্তির নিগূঢ় তথ্য সংগ্রহ করা তাদের জন্য ভীষণ সহজ হয়ে গেছে।
কিন্তু আপনার টার্গেটের ব্যবহৃত ডিভাইস, সেবা বা নেটওয়ার্ক কোম্পানি যদি আপনাদের নিজেদের না হয়? বা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রুদেশের হয়? তাহলে তো আপনি ওই ডিভাইস থেকে তথ্য পাচ্ছেনই না। বরং, আশঙ্কা থাকছে যে আপনার দেশের তথ্য আপনার শত্রুদেশ পেয়ে যাচ্ছে। আপনি যেহেতু চুরি করেন, তাহলে আপনি এটাও জানেন যে, অন্যরা কীভাবে চুরি করে। তার ওপর ওই কোম্পানি যদি বিশ্বজুড়ে জায়ান্ট হয়ে উঠে, তাহলে আপনার দেশের কোম্পানি তো ব্যবসাই করতে পারছে না। সব দিক দিয়েই ক্ষতি। হুয়াওয়ের সঙ্গে আমেরিকার বিরোধের ব্যাখ্যা এটাই।
সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে আপনি আমেরিকান হিসেবে কী করবেন? নিশ্চয়ই এমন ব্যবস্থা করতে চাইবেন যাতে ওই প্রতিষ্ঠান আর ব্যবসা করতে পারবে না। কর বা শুল্ক বাড়িয়ে লাভ নেই, কারণ আপনার জনগণই ওদের হয়ে তা পরিশোধ করবে। তাহলে কী করতে হবে? কোম্পানিটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ঠিক এটাই হয়েছে হুয়াওয়ের সঙ্গে। এর আগে আরেক চীনা কোম্পানি জেডটিই’র সঙ্গেও এরকম হয়েছিল। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র জেডটিই’কে কালোতালিকাভুক্ত করে।
জেডটিই’র গল্পটাও কাছাকাছি। নেটওয়ার্কিং ব্যবসার পাশাপাশি, মোবাইল ব্যবসায়ও ভালো করছিল প্রতিষ্ঠানটি। তাদের স্মার্টফোন মডেল নুবিয়া এখানে দারুণ দৃষ্টান্ত। এখন যে বিভিন্ন কোম্পানি ফুল স্ক্রিন ডিসপ্লে ও শুধু রিয়ার ক্যামেরা দিয়ে ফোন বানাচ্ছে, এমন ফোন অনেক আগেই এনেছিল নুবিয়া। এটি ছিল এক অসাধারণ উদ্ভাবন। এই ফোনের দু’টি ডিসপ্লে। একটি সামনে, আরেকটা পেছনে। মজার বিষয় হলো, পেছনের ডিসপ্লেটি চালু না করার আগ পর্যন্ত বুঝাই যায় না যে এটি একটি ডিসপ্লে।
জেডটিই’র মতো ২০১৯ সালে এসে হুয়াওয়ে আমেরিকায় কালোতালিকাভুক্ত হয়। এতদিনও যে হুয়াওয়ে আমেরিকায় ব্যবসা করতে পারতো, তা নয়। আমেরিকার বাজার ছাড়াই হুয়াওয়ের স্মার্টফোন এই অবস্থানে এসেছে। মার্কিন বাজারে অবাধ প্রবেশাধিকার থাকলে অনেক আগেই হয়তো এক নম্বরে চলে যেতো। আগে থেকেই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রিতে বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু এখন যেটা হয়েছে যে, হুয়াওয়ের সঙ্গে আমেরিকার কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারবে না।
প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার সমাজপতিদের মতো যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে না পারলে তাদেরকে একঘরে করে রাখার নীতি নিয়েছে। আমেরিকার পরামর্শ উপেক্ষা করে ইউরোপ যখন হুয়াওয়েকে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে, তখনই তাড়াতাড়ি করে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধই করে দিল দেশটি। আমেরিকার সবচেয়ে কাছের মিত্র বৃটেন অবশ্য হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে এখনও কোনো মন্তব্য করছে না। আদৌ নিষিদ্ধ করবে কিনা, সেটাও বলা যাচ্ছে না। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হলো, ব্রেক্সিটের কারণে ইউরোপের বাজার সীমিত হয়ে যাওয়ায়, বৃটেনের জন্য নন-ইইউ বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই হয়তো চীনকে চটাতে চায় না বৃটেন। এছাড়া বৃটিশদের একটি কৌশল তো আছেই: ইফ ইয়ু ক্যাননট বিট দেম, জয়েন দেম। ফলে বৃটেন এখানে ঝোপ বুঝে কোপ দেবে।
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফলে হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে গুগল, ইন্টেল ও কোয়ালকম। তবে গুগলের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়াটা হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ব্যবসায় বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে। এ কারণে তারা পরবর্তী স্মার্টফোনগুলোর অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে গুগল সার্টিফিকেট পাবে না। তবে অ্যান্ড্রয়েড যেহেতু ওপেনসোর্স, সেহেতু যে কেউই এই অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু জিমেইল, গুগল ম্যাপ ও ইউটিউব যেহেতু ওপেনসোর্স নয়, সেহেতু হুয়াওয়ের পরবর্তী ফোনে গুগলের এসব অ্যাপ দেওয়া যাবে না। তবে যে ফোনগুলো ইতিমধ্যেই মার্কেটে চলে এসেছে, সেগুলোতে সব সেবা, অ্যাপ ও অ্যাপের আপডেট ঠিকঠাক পাওয়া যাবে। তবে অ্যান্ড্রয়েডের পরবর্তী সংস্করণের আপডেট পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, আপনার হুয়াওয়ে ফোন যদি এখন অ্যান্ড্রয়েড ৮ চালিত হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে অ্যান্ড্রয়েড ৯ আর চালাতে পারবেন না। চালাতে গেলে জিমেইল, ইউটিউব ও ম্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। অবশ্য, ব্রাউজার থেকে পারা যাবে।
হুয়াওয়ের ফোন যারা ব্যবহার করেছেন, তারা জানেন এই ফোনগুলো কতটা স্মুথ। ফোনের অনেক ফিচারই হুয়াওয়ের আবিষ্কৃত। এমনকি খোদ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উন্নয়নেও হুয়াওয়ের অবদান আছে। লং স্ক্রিনশট, একাধিক ক্যামেরা- এসব হুয়াওয়ে করে দেখিয়েছে। এমনকি স্যামসাং তাদের সর্বশেষ এস১০+ মডেলের ফোনে যে পাঞ্চহোল ব্যবহার করেছে, সেটি হুয়াওয়ে তাদের অনার ভিউ ২০ ফোনে গত বছর দিয়েছে। আর ফোনের নেটওয়ার্কের জন্য হুয়াওয়ে সবসময়ই সেরা। অন্য ফোনে সিগন্যাল না থাকলেও, হুয়াওয়েতে থাকে। এটা হয়তো তাদের নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্টের কারণে।
হুয়াওয়ে জানতো একদিন তাদেরকে উইন্ডোজ বা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এজন্য তারা বেশ কয়েক বছর ধরে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) তৈরির কাজ করে যাচ্ছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হুয়াওয়ে ঘোষণা দিয়েছিল যে তাদের নতুন ওএস প্রস্তুত আছে। এটাকে তারা প্লান বি হিসেবে রেখেছে। দেখা যাক তাদের নতুন ওএস কেমন হয়।
আমাদের এটিও মনে রাখা প্রয়োজন, চীনে কিন্তু গুগল, ফেসবুক সহ বিভিন্ন সার্ভিস নিষিদ্ধ। ফলে আমেরিকারও উচিৎ চীনা ফোনগুলোতে আমেরিকান কোম্পানির সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া। এইদিক থেকে হিসাব করলে ঠিকই আছে।
আমেরিকানরা যে অভিযোগ করছে, সেটা হলো চীন তাদের ডিভাইস দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। কথাটা চীনা কোম্পানীগুলো অস্বীকার করলেও, তাদেরকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। কারণ চীনা প্রত্যেকটি কোম্পানী তাদের তথ্য সরকারকে দিতে বাধ্য। না হয় সেখানে তারা ব্যবসা করতে পারবে না। চীন কোনো গণতান্ত্রিক বা নাগরিক অধিকারের দেশ নয়।
কথা হচ্ছে, আপনার আমার উপর গুপ্তচরবৃত্তি কিন্তু সবাই করছে। আমেরিকান কোম্পানীগুলোকে দিয়ে আমেরিকানরা করছে, চীনা কোম্পানীকে দিয়ে চীনারা করছে। তবে চীন ও রাশিয়াতে তাদের সরকার যতটা সহজে তথ্য পেতে পারে, মার্কিন সরকার এত সহজে তথ্য পেতে পারে না। যেমন, গুগল ও ফেসবুক সহজেই সরকারকে তথ্য দিয়ে দিলেও, অ্যাপল ও টুইটার দেয় না।
আপনাদের মনে থাকার কথা, একজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর আইফোনের লক খুলে দেয়ার জন্য এফবিআই অ্যাপলকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু অ্যাপল খুলে দেয়ার বদলে আদালত দেখিয়ে দিয়েছিল। আদালতে এফবিআই হেরে গিয়েছিল। অ্যাপল আর সেই লক খুলে দেয়নি।
পরিশেষে, আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ে একটা হোঁচট খাবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই টেলিকমিউনিকেশন জায়ান্ট এখন কীভাবে এই সংকট সামলে উঠে সেটাই এখন দেখার বিষয়। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আপনি হুয়াওয়েকে যতই অপছন্দ করেন না কেন, কোনো না কোনোভাবে আপনি হুয়াওয়ের ব্যবহারকারী। হতে পারে, আপনার টিভির ভেতরের চিপ হুয়াওয়ের তৈরি, কিংবা আপনার মোবাইলের নেটওয়ার্ক।
(ঈষৎ পরিমার্জিত, সংক্ষেপিত)