কখনো খরা অথবা বন্যা আবার রোগ, পোকা বা দুর্যোগ কেড়ে নেয় কৃষকের ক্ষেতের ফসল তবুও থেমে থাকে না। তারা চালিয়ে যান তাদের কার্যক্রম। সবকিছু মেনে নিলেও এবারে ধানের নিম্ন দাম আর লোকসান মেনে নিতে পারছে না কৃষক। শুধু ঝরছে দু’চোখের জল। মুখে নেই কথা, নেই কোনো উৎসব, শুধুই বাড়ছে হতাশা। চলতি মৌসুমে উপজেলার ভালো ফলন দেখে কৃষকের যেমন আনন্দে মন ভরে গিয়েছিল ঠিক ফসল ঘরে তোলার সময় ধানের দাম না থাকায় কৃষকরা যেন বোবা হয়ে গেছে। ৩ কেজি ধানের মূল্যে ১ কেজি লবণ মিললেও এক মণ ধানে মিলছে না ১ কেজি মাংস কিংবা মাছ।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চলতি বোরো মৌসুমে ফলন বেশ ভালো হয়েছিল।
ফলন দেখে কৃষকরাও বেশ খুশি ছিল, ছিল নানান স্বপ্ন, ছিল বুক ভরা আশা। কিন্তু আশা আর স্বপ্ন বিলীন করে দিয়েছে ধানের নিম্ন দাম। ধানের দাম নিয়ে অখুশি হয়ে পড়েছে কৃষক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অথচ এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৫৪০, খাসির মাংস ৭০০ টাকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ শ’ টাকা থেকে ১২ শ’ টাকা। কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, হামার কি কেউ খবর নিবে, হামার ক্ষতি হইলেই কি আর মরলেই কি? কৃষক নজির হোসেন বলেন, ৬০ শতক জমির ধান চাষ ও সার বাবদ খরচ যা হয়েছে এখন ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে বাকিটাও প্রায় শেষ। এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে মণপ্রতি প্রায় দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত। কৃষক হোসেন আলী বলেন- ধান বিক্রি করে শ্রমিকের মূল্য দিতেই মূলধন শেষ। এছাড়াও ধানের দাম না থাকায় কেউ জমি বর্গা নিতেই চাচ্ছে না। খয়বার হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, কৃষকরা ধান বিক্রি করতে গেলে দাম পান না। কিন্তু কিনতে গেলে দাম চড়া। গরু বিক্রি করতে গেলে দাম কমে যায়। অথচ এখন এক মণ ধান বিক্রি করেও এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৮শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৭ হাজার ৬ শ’ ৭৫ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খালেদুর রহমান বলেন- এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এছাড়াও আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিচ্ছি যেন তারা ক্ষতির মুখে না পড়েন এবং লোকসান হলেও তা পুষিয়ে নিতে পারেন।