গতকাল দেয়া হয়েছে ১লা জুনের টিকিট। ঈদের আগে ওইদিন শেষ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় টিকিটের চাহিদাও বেশি। তার উপরে ছুটির দিন। তাই শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের কাউন্টারে বাড়তি চাপ টিকিট প্রত্যাশীদের। এদের মধ্যে টিকিট হাতে পেয়ে কারো মুখে স্বস্তির হাসি। আবার অন্যদিকে টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায় মলিন মুখে হাজারো যাত্রী।
নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন গৃহকর্ত্রী তারান্নুম তারিন নওম। তিনি জানান, বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে হলেও শ্বশুরবাড়ি সিলেটে।
স্বামী কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে সিলেটে গেছেন। তাই ঈদ করতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে তাকে একাই যেতে হচ্ছে।
তারান্নুম তারিন নওম বলেন, আমার স্বামী বাস জার্নি একদম পছন্দ করেন না। তাই ১লা জুনের রেলের টিকিটের জন্য রাত থেকে অপেক্ষায় আছি। সেহরির পর কাজের মেয়েটাকে লাইনে দাঁড় করিয়েছিলাম। এখন নিজেই দাঁড়িয়ে আছি। আশা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যে টিকিট পেয়ে যাব। তাহলেই সব কষ্ট উসুল হয়ে যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা নিয়াজ মোরশেদ বলেন, আমি গণপূর্ত বিভাগে চাকরি করি। টিকিটের জন্য গতকাল ভোরে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো টিকিট পাইনি। টিকিট পাব কি না এ শঙ্কায় আছি।
টিকিট প্রত্যাশীদের অনেকেই জানান, টিকিটের জন্য বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১০টা থেকেই চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে অবস্থান নেন টিকিট প্রত্যাশীরা। তাদের অনেকেই সেহেরির খাবার খেয়েছেন স্টেশনে। এতকিছুর পরও টিকিট হাতে পেয়ে তাদের অনেকেই ভুলে গেছেন রাতের কষ্ট। আবার অনেকে একটু দেরিতে আসায় ভুগছেন টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায়।
তবে তাদের জন্য আশার কথা শোনালেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, গত দু’দিন সকালে প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও দুপুরের পরেই কাউন্টার ফাঁকা হয়ে যায়। আজ তা হয়নি। ছুটির দিন হিসেবে বাড়তি চাপ ছিল। তবে আশা করছি, সবাই টিকিট হাতে নিয়েই বাড়ি ফিরবেন।
এ ছাড়া অনলাইনে প্রথম দিনের (৩০শে মে) কিছু অবিক্রীত টিকিট আছে। নিয়ম মাফিক টিকিট বিক্রি শেষ হলে, ওই অবিক্রীত টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করা হবে।
তিনি জানান, ৯টি আন্তঃনগর ও দুটি বিশেষ ট্রেনের ১২ হাজার টিকিট রেল স্টেশনের ১০টি কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে। একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারছেন। এ জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। তবে একাধিক ট্রেনের ও ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির টিকিট কোনো ব্যক্তি একা সংগ্রহ করতে পারবে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা এসএম মুরাদ হোসেন বলেন, এবার জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট বিক্রি হওয়ায় কালোবাজারির সুযোগ নেই। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কাউন্টারে রেলওয়ের নিজস্ব পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার ভিআইপি টিকিট সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ৫০ শতাংশ টিকিট অ্যাপসে দেয়া হয়েছে। বাকি টিকিট কাউন্টারে। তবে কাউন্টারের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিটের অধিকাংশ বিক্রি হলেও অ্যাপসে দেয়া অধিকাংশ টিকিট অবিক্রীত রয়েছে। এজন্য তিনি দুষছেন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে (সিএনএস)।
তিনি জানান, ৫০ শতাংশ টিকিট অ্যাপসে দেয়া হলেও মঙ্গলবার থেকে সার্ভার রহস্যজনক কারণে স্লো রয়েছে। তবে কাউন্টারে এসে বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকিট না পাওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টার নিজাম উদ্দন জানান, দশটি আন্তঃনগর ট্রেনের (৩১শে মে) টিকিট বরাদ্দ ছিল মোট ৭ হাজার ২৫০টি। এর মধ্যে তিন হাজার ৬২৫টি টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা ছিল কাউন্টারে। বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট অ্যাপসে। বুধবার কাউন্টারে দশটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭৭৮টি। অবিক্রীত রয়েছে ১ হাজার ৮৪৭টি। অ্যাপসে বিক্রি হয়েছে ৮৯১টি। অবিক্রীত রয়েছে ২ হাজার ৭৩৪টি টিকিট। কাউন্টার আর অ্যাপস মিলে ৩১শে মের টিকিট অবিক্রীত রয়েছে মোট ৪ হাজার ৫৮১টি। কাউন্টারে দেয়া মোট ৩ হাজার ৬২৫টি টিকিটের মধ্যে ১ হাজার ৮৪৭টি টিকিট অবিক্রীত থাকলে বেলা ১১টায় কেন কাউন্টার থেকে ৩১শে মের টিকিট নেই বলে বলা হলো, এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ২৫শে মে পাওয়া যাবে ৩রা জুনের টিকিট এবং ২৬শে মে পাওয়া যাবে ৪ঠা জুনের টিকিট। এ ছাড়া ফিরতি যাত্রীদের জন্য ২৯শে মে দেয়া হবে ৭ই জুনের টিকিট। একইভাবে ৩০ ও ৩১শে মে এবং ১লা ও ২রা জুন দেয়া হবে ৮, ৯, ১০ ও ১১ই জুনের টিকিট।