ভারতীয় নাসির বিড়ি চোরাকারবারির অভিযোগ উঠেছিল সিলেটের জৈন্তাপুরের ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান থাকাকালে সরাসরি চোরাকারবারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালতে চোরাকারবারি হিসেবে তিনি দোষী হয়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন এবং সাজাও ভোগ করেন। এখন গত ৪ মাস ধরে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে
বরখাস্ত রয়েছেন আবদুর রশিদ। এরপরও থেমে নেই চোরাকারবার। এক সময় জৈন্তাপুরে সীমান্ত চোরাকারবারিদের নিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রশাসনকে। পরে অবশ্য প্রশাসনের কঠোরতার কারণে চোরাকারবারি কমেও এসেছিলো। চোরকারবারিরাও সমাজের মূল স্র্রোতে ঢুকে গিয়েছিলো।
কিন্তু জৈন্তাপুরে আবার সেই পুরনো দৃশ্য। চোরাকারবারিদের কাছে কার্যত অসহায় পুলিশ। র্যাব’র অভিযানেও কাজ হচ্ছে না। সিলেটের জৈন্তাপুরের চোরাকারবারিরা র্যাবকে দিয়েছে টক্কর। সাধারণ মানুষকে ফুসলিয়ে র্যাব’র বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলে রাস্তা অবরোধ করিয়েছে।
ফলে র্যাব এই ঘটনায় শতাধিক মানুষকে আসামি করে মামলা করেছে। ছেড়ে দিয়েছে এ ঘটনায় আটক হওয়া বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাহিরকেও। র্যাব-৯ এর এএসপি মিডিয়া থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- বুধবার রাতে র্যাব’র একটি অভিযানিক দল জৈন্তাপুরে এলাকায় মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বটতলা বাজার সংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এর মধ্যে কালাদাস নামের এক আসামি কৌশলে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামির তথ্য মতে পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হরিপুর বাজার পৌঁছলে ১০০ থেকে ২০০ জন লোক জড়ো হয়ে বেআইনিভাবে একতাবদ্ধ হয়ে র্যাব’র সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং র্যাব’র ওপর হামলা চালায়। এ সময় র্যাব ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে।
এর মধ্যে ফতেহপুর ইউপি’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাহিরও ছিলেন। এ অবস্থায় র্যাব’র পক্ষ থেকে ১২ জনকে আসামি করে এবং আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে- সিলেটের হরিপুরে অভিযান চালানো র্যাব’র উপর হামলা চালিয়েছিলো চোরাকারবারিরা। পরে হামলার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সড়ক অবরোধও করে চোরাকারবারিদের সহযোগীরা। চোরাইপথে নিয়ে আসা ভারতীয় নাছির বিডি, মাদক সামগ্রী ও পাচারকৃত গরু ধরতে গেলে চোরাকারবারিদের গডফাদারদের ইশারায় র্যাব’র টহল টিমের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় র্যাব’র অফিসারসহ বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। এরই জের ধরে বুধবার রাত ২টায় হরিপুর অঞ্চলে বিভিন্ন গ্রামে র্যাব’র ওপর হামলাকারী ও চোরাই মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল কাহির পঁচা, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ৩০ জনকে আটক করে র্যাব-৯ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চেরাকারবারিদের রক্ষা করতে তাদের ইশারায় স্থানীয় কিছু লোক ‘নিরীহ মানুষদের হয়রানির করার প্রতিবাদে’ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবরোধ করে। রাস্তা অবরোধের ফলে আটকা পড়েন সহস্রাধিক যাত্রী, জরুরি কাজে আসা জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারী, তামাবিল স্থলবন্দরের অফিসার ও ইমিগ্রেশনে যাত্রায়াতকারীরা। অভিযোগ উঠেছে- হরিপুর এলাকার চোরাকারবারিদের গডফাদাররা গোটা উপজেলার সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার নির্দেশেই সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, আসামপাড়া, মিনাটিলা, কেন্দ্রি হাওর, ডিবিরহাওর, ফুলবাড়ী, খলারবন্দ, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, জালিয়াখলা, কালিঞ্জি, লালখাল বাগান, আফিফানগর চা বাগান, বাঘছড়া, গঙ্গারজুম, তুমইর ও ইয়াংরাজা দিয়ে ভারতীয় গরু, মহিষ এবং ইয়াবা সহ মাদকের চালান বাংলাদেশে বানের পানির মতো প্রবেশ করছে। এই চোরাকারবারিদের সঙ্গে পুলিশের বিশেষ সংখ্যের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিজিবি’র সীমান্ত ফাঁড়ি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকেও অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে।