× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যেমন চলে লন্ডনের রিকশা

ইংল্যান্ড থেকে

ইশতিয়াক পারভেজ, ইংল্যান্ড থেকে
৮ জুন ২০১৯, শনিবার

ওয়েস্ট মিনিষ্টার মোড় থেকে রিকশা নিয়ে চলে এলাম লন্ডন আই-এর  সামনে। গুনে গুনে ভাড়া দিতে হলো ২০ পাউন্ড। যা বাংলাদেশের মুদ্রায় দুই হাজার টাকারও বেশি। শুনে বিশ্বাস করতে পারছেন না! হয়তো না, আবার হাসতেও পারেন এই ভেবে যে লন্ডনে আবার রিকশা কোথায়? হ্যাঁ আছে, এটি বাংলাদেশের অনেকটা বর্তমান অটোরিকশার মতো যন্ত্রচালিত। তবে বেশ পরিপাটি, আছে গান শোনার ব্যবস্থা আর বসার জন্য একবারে গাড়ির মতো আরামদায়ক সিট। এখানে যারা এটি চালান তারা কখনো পায়ে প্যাডেল ঘুরান আবার কখনো বা মটরের সাহায্য নেন। বেশ কয়েকটি জায়গায় আপনাকে এই রিকশা পৌঁছে দেবে খুব আরামেই তবে তার জন্য খরচ করতে হবে বেশ মোটা অংকের অর্থ। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি।
এটি বলতে পারেন ঢাকার রাস্তায় যেমন এখনো ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায় এটি ঠিক তেমন। লন্ডনের ঐতিহ্যের সুউচ্চ ঘড়ি বিগ বেনে এখন সংষ্কার কাজ চলছে। তাই ঠিক করেছিলাম লন্ডন আইয়ে যাব। রাস্তা পার হতেই দেখলাম সারি সারি রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা আমাদের রিকশা চালকদের মতোই। দরদাম করে উঠলাম একটিতে। আমাদের চালক পাকিস্তানের নাসির উল্লাহ। বেশ ফুর্তিবাজই মনে হল তাকে। রিকশায় উঠতে নিজেই তুলে দিলেন ছবি। বললেন লন্ডনে এমন রিকশা আর পাবে না। অনেকটা উড়িয়েই নিয়ে চললেন গন্তব্যের দিকে। সেই সঙ্গে জানালেন চাইলে এই রিকশা তিনি বৃটেনের রাণীর প্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসেও নিতে পারেন। তার জন্য লাগবে ৩০ পাউন্ড।
অলিগলি ঘুরে দামি দামি গাড়ির মাঝে এই রিকশা চলছিল রাজকীয় যানের মতো। একটু দূরে যেতেই গান ছেড়ে দিলেন চালক নাসিরুল্লাহ। কথায় কথায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসতেই বলে উঠলেন, বাংলাদেশ দারুণ খেলে। আশা করি এবার ওরা অনেক ভালো করবে। পরক্ষণেই আফসোস করলেন আহা, পাকিস্তান ক্রিকেটের  যে কী হল! বলতে বলতে তিনি  পেরিয়ে যাচ্ছিলেন একের পর এক গলি। এরপর নিয়ে এলেন ঠিক লন্ডন আইয়ের সামনে। নেমে ভাড়া হাতে তুলে দিতেই ভীষণ খুশি। বললেন বাড়ি পাকিস্তানে হলেও ইংল্যান্ডেই বড় হয়েছেন তিনি। থাকেন পরিবার নিয়ে। এখানে রিক্সা চালিয়ে  বেশ স্বাচ্ছন্দেই আছেন। আর থাকবেন না কেন? এই শহরে পর্যটকদের কাছে তার বাহন যে বেশ জনপ্রিয়। যারা এখানে পাউন্ড খরচ করতে আসেন তাদের জন্য রিক্সায় চড়া সখের বিষয়। ভারতীয়-পাকিস্তানি ছাড়াও আছেন শ্রীলঙ্কার রিকশা চালক। তবে মজার বিষয় বৃটেনে স্থানীয় অনেক যুবকও এখন এই রিক্সাতে জিবীকা খুঁজছেন।
প্রশ্ন আসতে পারে লন্ডনের মত শহরে এমন রিক্সা কিভাবে চলছে? জানিয়ে রাখা ভালো এখানে রিকশাগুলো একবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। অনেক সময় চলকদের মানতে দেখা যায় না ট্রাফিক আইনও। বৃটেনের ১৮৬৯ সালের একটি আইনের কিছু ফাঁক ফোকড় ব্যবহার করে  সেন্ট্রাল লন্ডনে রিক্সা চালাচ্ছেন চালকরা। এমন কি কোনো ধরনের প্রশাসনিক তদারকির বাইরেও রয়েছে রিক্সাগুলো। তবে এখন এই বাহন বেশ জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। বিশেষ করে তারা ডেকে ডেকেই যাত্রীদের রিক্সায় তোলেন। যা সবাইকে বেশ আনন্দ দেয়। তবে বিরক্ত করেন না। কারণ এখানে পুলিশ ও আইন বেশ কড়া।
লন্ডনে দারুণ এই বাহনে চড়তে আবার বিপদেও পড়তে হয় সাধারণ পর্যটকদের। সুযোগ পেলেই অনেক চতুর চালক আদায় করে নেন কয়েক গুণ বেশি ভাড়া। বিশেষ করে ২০১৫’র দিকে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বেশ আলোচিত। মাত্র তিন মিনিট রিক্সায় চড়ে ২শ পাউন্ড গুনতে হয় এক যাত্রীকে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ হাজার  টাকারও অনেক বেশি। অক্সফোর্ড সার্কাস থেকে মার্বেল আর্চের পর্যন্ত এমন ভাড়া দাবি করেছিলেন চালক। যাত্রী রাজি হয়ে উঠেও যান। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নামার সময় ভাড়া দিতে গিয়ে। সেখানে থাকা ক্যাব চালকরা পাকরাও করেন সেই চালককে। ডাকা হয় পুলিশকেও। কিন্তু ভাড়া নিয়ে কোনো আইন না থাকায় পুলিশ তেমন কিছু করতে পারেননি চালককে সতর্ক করে দেয়া ছাড়া। অবশ্য এই ঘটনার পর থেকে প্রতিটি রিক্সাতে ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর