দেশ বিদেশ

দুই রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার মন্ত্রী বললেন ‘রুটিন বদলি’

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২০১৯-০৬-১১

বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রদূতকে আচমকা ঢাকায় ফিরিয়ে আনার  আদেশকে ‘রুটিন বদলি’ আখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। রাষ্ট্রদূতদ্বয়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ‘গুরুতর’ অভিযোগ এবং তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জরুরি তাদের ফিরতে বলা সংক্রান্ত খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী গতকাল তা নাকচ করেননি, আবার সায়ও দেননি। বলেন, আমাকে তাদের বিষয়ে আরো জানতে হবে। তবে তার আগে মন্ত্রী বলেন, এটা বলতে পারি আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যত্র দু’জনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু ওই দুই রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি বা ব্যবস্থা নিতেও বলিনি। মন্ত্রী বলেন, একটা রেওয়াজ হচ্ছে ৩ বছর হয়ে গেলে আমরা রাষ্ট্রদূতদের বদলি করি। আমি যেটা শুনেছি ওই দু’জন রাষ্ট্রদূতের ৩ বছরের বেশি হয়েছে। একজনের সম্ভবত পৌনে ৪ বছর। তাই তাদের বদলি হচ্ছে। সোমবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনির্ধারিত ব্রিফিংয়ে অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে মন্ত্রী ওই দুই রাষ্ট্রদূতের বদলির খবর নিয়েও কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সামনের দিনে আরও অনেক রদবদল হবে। এগুলোও রুটিন বদলি। যাদের ৩ বছরের বেশি হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বদলি হবে। সন্তানদের লেখাপড়ায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে এ জন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ওই সব বদলির কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, ইরান ও লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদ্বয়কে ফিরিয়ে আনার আদেশ জারি হয়েছে গত এপ্রিলে। তাদের একজনের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন এবং অন্যজনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্ত হয়েছে। সূত্র বলছে, গত বছরের শেষে ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ আসে। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। আর বৈরুতে নিযুক্ত আবু মোতালেব সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগ এলে তদন্ত করেন চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম। কাছাকাছি সময়ে মরক্কোসহ আরও অন্তত ৩টি রাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ জমা পড়ে। মরক্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য ফাইল ওঠেছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেটি আটকে যায়। অবশ্য ইরান ও লেবাননে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয় এবং উভয় রিপোর্ট জমা পড়ে। কিন্তু রিপোর্টে কী সুপারিশ করা হয়েছে তা অতীতের মতই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে সূত্র দাবি করেছে ওই রিপোর্ট দু’টিতে থাকা প্রায় অভিন্ন সুপারিশের প্রেক্ষিতেই না-কী ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম মুজিবর রহমান ভূঁইয়া ও লেবাননে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকারকে ঢাকায় ফিরতে চিঠি বলা হয়েছে। সূত্র এ-ও বলছে, ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ অনেক পুরনো। জাপান রাষ্ট্রদূত থাকাকালেও তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল যার প্রেক্ষিতে তাকে টোকিও থেকে ফেরত আনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গাই হবে মূখ্য আলোচ্য: এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছেন, জুলাই’র প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য চীন সফরে রোহিঙ্গাই হবে মূখ্য আলোচ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, সরকার প্রধানের বেইজিং সফরের পর মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চীনের বাড়তি চাপে পড়বে। মন্ত্রী এ-ও বলেন, চীন বরাবরই এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে, তারা চায় মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এর সমাধান আসুক। তারা এ জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নিয়মিতভাবে উভয়কে উৎসাহ দিয়ে চলেছে। মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কখনও বলেনি যে তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে না। তারা বারবার ফেরত নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তারা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে না। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চীনের মত আমাদের অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্র যাদের মিয়ানমারের ওপর প্রভাব রয়েছে তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য নেপি’ডকে চাপ দেয়। যাতে নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। মন্ত্রী ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ধন্যবাদ জানান। বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়েছে তার বিচারে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে ওআইসি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)-এ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি। ওই আদালত থেকে যদি কোন রায় হয় তাহলে মিয়ানমার আরও বেশি চাপে পড়বে এবং ওই রায় বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সহজ হবে। এটি দুনিয়ায় জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে আশা করেন মন্ত্রী। উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সমাপ্ত টোকিও সফর, বাংলাদেশে জাপানের সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ এবং দেশটিতে এদেশের দক্ষ জনশক্তির কাজের সূযোগ সৃষ্টি তথা দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়েও মন্ত্রী বিস্তারিত তুলে ধরেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status