× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রাম বন্দরে সংকট

দেশ বিদেশ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৫ জুন ২০১৯, শনিবার
ফাইল ছবি

জলে কনটেইনার ভর্তি জাহাজ জট। স্থলে ইয়ার্ডেও কনটেইনার জট। ফলে নিয়মানুযায়ী ৩০ শতাংশের বদলে খালি নেই ১০ শতাংশ জায়গাও। এতে জলে এবং স্থলে দুই দিকেই নড়াচড়া একরকম বন্ধ। এ নিয়ে মহাবিপদে চট্টগ্রাম বন্দর।
বিপদ এড়াতে অতি সাবধানতা নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। তবুও শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশপথে কর্ণফুলী নদীতে কন্টেইনার ভর্তি দুটি জাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠানামার কাজ একেবারে বন্ধ ছিল বলে জানান বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার ও জাহাজ জট দেখা দেয়। স্বাভাবিক সময়ে জেটিতে এবং বহির্নোঙরে ৫০ থেকে ৭০টি জাহাজের অবস্থান থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৮৯টি। এরমধ্যে বন্দরের প্রধান জেটিতে ১৬টি এবং বহির্নোঙরে ৭৩টি জাহাজ অবস্থান করছে। মূলত ঈদের টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় কনটেইনার জটের। তার প্রভাব পড়েছে জাহাজের গড় অবস্থানকালীন সময়েও। আগে প্রতিটি জাহাজ দু থেকে তিন দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দর ত্যাগ করলেও এখন বহির্নোঙরেই থাকতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ দিন। অন্যদিকে ঈদের আগের এবং পরের তিনদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী যানচলাচল এবং অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। আমদানিকারকরা এ জন্য পণ্য ডেলিভারি নিতে অনাগ্রহী হওয়ায় বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার জট সৃষ্টি হয়। এ কারণে ১৩ই জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত প্রায় ৪ হাজার কনটেইনার জমে যায়।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে জাহাজ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার নামানো হচ্ছে। বিপরীতে ডেলিভারি হচ্ছে ৪ হাজারের মতো। এতে স্থলে কনটেইনার জট বাড়ছেই। এর আগে মে মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে কয়েক দিন জাহাজ চলাচল এবং ডেলিভারি বন্ধ ছিল। এ কারণে সে সময় বন্দরের জেটিতে প্রায় ৩৩ হাজার কনটেইনার আটকা পড়ে। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দর। ওমর ফারুক জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে অতি সাবধানতার মধ্যে কাজ করা সত্ত্বেও শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বন্দরের জেটি থেকে একটি ওয়েল ট্যাংকার বহির্নোঙ্গরের দিকে যাওয়ার সময় বহির্নোঙ্গর থেকে কনটেইনারবাহী একটি জাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় কোন জাহাজ বাইরে থেকে বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। আবার বন্দর থেকে বেরও হতে পারেনি। অন্য একটি জাহাজকে বাঁচাতে গিয়ে ওই দুইটি জাহাজের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। টাগ বোট দিয়ে জাহাজ দুটিকে সরিয়ে নেয়ার পর বিকেল থেকে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়।  
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজ জট দেখা দেয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ধারণ ক্ষমতার বাইরে প্রায় ৪ হাজার কনটেইনার জমে গেছে-এমন খবরে ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আমদানি পণ্যের চালান সময় মতো ডেলিভারি না হলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সেই সঙ্গে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, দেশীয় শিল্প উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে রপ্তানির ক্ষেত্রেও এর মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের শিপমেন্ট বিঘ্নিত হলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিলও করতে পারে। ফলে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের মালিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সমপৃক্ততা রয়েছে। শুধুমাত্র বন্দর সচল থাকলে পণ্য খালাস কিংবা ডেলিভারি সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে শুরু করে পণ্যবাহী যান চলাচলও স্বাভাবিক থাকতে হয়। বন্দরে আমাদের কনটেইনার ভর্তি পণ্য রয়েছে, কিন্তু সড়কে সঠিক সময়ে পণ্যবাহী যানচলাচল না করায় ইচ্ছে থাকলেও ডেলিভারি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কনটেইনার জটের প্রভাবে বন্দরে জাহাজ অবস্থানের সময় বেড়ে গেছে। ভেতরের জাহাজগুলো বের না হওয়ায় বাইরের জাহাজ আসতে পারছে না।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইউএস। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্দরে কনটেইনার ছিল ৪২ হাজার ৪২৫ টিইউএস। যদিও ইয়ার্ডে ক্রেনসহ কনটেইনারবাহী বিভিন্ন যান চলাচলের সুবিধার্থে ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। সেখানে কনটেইনার জটে ১০ শতাংশ জায়গাও খালি না থাকায় পণ্যবাহী যান চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।  উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। বিপরীতে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার বের করা হয়েছে প্রতিদিন মাত্র সাড়ে তিনশ’র মতো। তাই প্রায় ৪০ হাজার কনটেইনারের স্তূপ জমে জট তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলেও অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর