নড়াইলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদেশ মল্লিককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করে। এসময় স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেয়া হয়। জানা গেছে, গত শনিবার সকালে শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিকের প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা দেয় নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সানজিনা এরিনা। খাতায় নাম না লেখার কারণে সানজিনা এরিনাকে মারধর করেন প্রদেশ মল্লিক। ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়। ছাত্রীর বাবা স্থানীয় ঠিকাদার মঈনুল্লাহ দুলু ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক প্রদেশ মল্লিককে কলার ধরে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসেন।
প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা জনপ্রিয় শিক্ষক প্রদেশ মল্লিককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে এবং এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় গতকাল সকালে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ওই ছাত্রীর অভিভাবকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। এদিকে ওই সময়েই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। অবস্থানকালে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইয়ারুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিতোষ মজুমদার, শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিক ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যাওয়ায় সকলকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে না গিয়ে অভিযুক্ত অভিভাবককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেন। একপর্যায়ে ঠিকাদার মঈনুল্লাহ দুলুর সমর্থকরা পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় ঠিকাদার রেজাউল আলম তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের দিকে তাক করে গুলি চালানোর হুমকি দেন। পরবর্তীকালে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে স্কুল গেটে বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলে, তাদের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে সন্ত্রাসী দুলুসহ তার সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মধ্যে একজন পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করতে তেড়ে আসে।’
এ ব্যাপারে মঈনুল্লাহ দুলু বলেন, বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার কোনো নিয়ম নেই। ওই শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে অনেক ছাত্রছাত্রীর মাঝে মেয়ের গায়ে হাত তুলেছেন। মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে গিয়ে জানালে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ওই শিক্ষককে ধরে থানায় দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওই শিক্ষককে মারধর করা হয়নি। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন জানান, ‘নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং ঘটনা যেহেতু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে, তাই তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আলম নামে একজনের পিস্তল থানায় জমা রাখা হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা পরিস্থিতি শান্ত করেছেন।