ম্যাচ শেষ হতেই বার বার সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা আসছিল প্রেস বক্সে। ৫ মিনিটের মধ্যেই তা শুরু হওয়ার কথা। বাংলদেশ থেকে আসা সংবাদকর্মীরা তখন ভীষণ ব্যাস্ত টনটনের সমারসেট স্টেডিয়ামে ইতিহাস বদলে দেয়া জয়ের গল্প লিখতে। তবে বসেছিলেন বিদেশি সংবাদকর্মীরা। তারা সোজা ছুটেছেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে। কারণ ইতিহাস বদলের নায়ক সাকিব আল হাসান যে আসবেন। শুনতে হবে তার কথা। কিভাবে ৫১ বল বাকি থাকতেই দলকে উপহার দিলেন এমন অসাধারণ জয়।
যে জয়ে বেঁচে থাকলো বাংলাদেশের স্বপ্ন। ঠিক পিছনে বসা অফিসিয়াল স্কোরার এক বিলেতি নারী পিঠ চাপড়ে বললেন তোমাদের দারুণ দিন। যাও দিনের নায়কের গল্প শুনে আসো। পড়িমরি করে ছুটতেই জানা গেলো তখনো আসেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ক্যারিবীয় অধিনায়ক তখন কথা বলছিলেন। সংবাদকর্মীদের খুব একটা আগ্রহ দেখা গেল না তার হারের গল্প শুনতে। সাকিব আসার পরই ঝাপিয়ে পড়লেন প্রশ্নের ফুলঝুড়ি নিয়ে। জানালেন কিভাবে তার এই দৃঢ় মানসিকতা দেখিয়েছেন আর তা কতটা প্রয়োজন ছিল তা দলের জন্য। সাকিব আল হাসান বলেন, ‘অবশ্যই মাসনিকতা দৃঢ় হওয়া খুবই প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে আসলে আপনার মানসিক দৃঢ়তাই বদলে দিতে পারে সব কিছু। শারীরিক সামর্থ্যতো থাকতে হবে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিকভাবে ফিট থাকা। আসলে এই জন্য যুদ্ধটা হয় নিজের সঙ্গে নিজের। নিজে যদি কেউ ভিতরে ভিতরে হেরে যায় তাহলে তার জেতার আর সম্ভাবনা থাকেনা। আসলে সব সময় নিজে নিজেই বলতে হয় আমি জিততে চাই। আর এটা করেই আমি নিজের সঙ্গে যুদ্ধ জিতেছি।’
ইংলিশ এক নারী রিপোর্টার প্রশ্ন করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা আরো গতি ও শর্ট বল করে। তাদের সামলাবেন কিভাবে? সাকিব যে উত্তর দিয়েছেন সেটি হয়তো প্রশ্নকর্তার আশাও ছিল না। তার উত্তরটা বলতে পারেন শক্তিশালী অজিদের আগাম বার্তাও। তিনি বলেন, ‘দেখেন এই চার ম্যাচে অনেক দারুণ দারুণ সব পেস বোলারদের বিপক্ষে খেলেছি। আপনারা জানেন প্রায় প্রতিটি দলেই সেরা দুজন ফাস্ট বোলার আছে যারা ১৪৫/১৫০ গতিতে বল করতে সক্ষম। আমরা তাদের বেশ ভালোভাবেই সামলেছি। আমরা শর্ট বল নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছি না। আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছি, নিউজিল্যান্ড ও উইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছি। এই তিন দলে অনেক গতি বোলার ছিল। আসলে আমাদের বেসিক কাজটাই করতে হবে। আমি মনে করি আমরা দক্ষ দল। এবং এই সব ভালভাবেই সামলাতে পারবো।’
বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচে লিটন কুমার দাস অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। নিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ করেছেন কারণ সাকিব যে তাকে অভয় দিয়েছেন বারবার। দু’জনের ব্যাটিংয়ের সময়টা নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার প্রথম থেকে বিশ্বাস ছিল জিতবো, যদি আমরা শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে পারি। তামিম যখন সঙ্গে ছিল তখনও বলেছি যে আমরা যদি শেষ পর্যন্ত ব্যাট করি জিতবো। এরপর যখন লিটন সঙ্গ দিচ্ছিল তখনও ওকে বার বার বলেছি আমরা ব্যাট করে যেতে পারলে জিতবো। লিটন ভালো করেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বের করে নিতে পেরেছি।’
দারুণ ব্যাটিংয়ের পরও বোলারদেরই কৃতিত্ব দিলেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের পেস বোলাররা নতুন বলে দারুণ শুরু করেছে। আমি মনে করি তাদের অসাধারণ শুরুটাই দলের জন্য বড় কাজে এসেছে। মাঝে কিছুটা রান হলেও শেষ দিকেও বোলাররা চেপে ধরেছে। তারা ভালো না করলে আসলে অনেক রান হতো। আমি বলবো এ জয়ে বোলাররা দারুণ ভূমিকা রেখেছে।’