× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

টাইগারদের জার্সি পরতে ফ্রাংকের ‘কান্না’

ইংল্যান্ড থেকে

ইশতিয়াক পারভেজ, টনটন থেকে
১৯ জুন ২০১৯, বুধবার

টনটনের সমারসেট স্টেডিয়ামে বসে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংস শেষ করে উইন্ডিজ। টাইগারদের সামনে ছুড়ে  দেয় ৩২২ রানের বিশাল টার্গেট। টাইগাররা সেই সময় ব্যাট করছিল। দারুণ খেলতে খেলতে আউট হন তামিম ইকবাল। ঠিক সেই সময় মাঠের এক কোনো বিলেতি এক কিশোর কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে। তার হাতের দিকে তাকাতেই চমকে উঠতে হলো! আইসিসি’র অফিসিয়াল শপ থেকে কিনে এনেছেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলের জার্সি। পাশেই বড় ভাই তাকে ধমক দিচ্ছিলেন কিছু একটা নিয়ে। একটু কাছে এগিয়ে যেতেই দুই ভাইয়ের মান-অভিমানের কারণটাও স্পষ্ট হলো।
টাইগারদের জার্সি কিনেই মাঠে তা পরে ফেলতে চাইছেন ছোটভাই ফ্রাংক। বড় ভাইও ধমক দিচ্ছেন। বড় ভাইয়ের বক্তব্য- ৩২২ করে জিতবে না তারা, কেন তুমি এই জার্সি পরতে চাও! এবার কিশোরের চোখে যেন পানিই চলে এলো। এবার বড় ভাই হেসে ফেললেন, ‘বলেন ঠিক আছে তোমার মন ভালো করে দিচ্ছি। যাও এটি পরে আসো।’ শুধু বলতে দেরি, দে ছু্‌ট। একটি বিজ্ঞাপন বোর্ডের আড়ালে গিয়ে খুলে ফেললেন গায়ে জড়ানো শার্ট ও জ্যাকেট। দ্রুত পরে নিলেন বাংলদেশের সেই স্মৃতিমাখা জার্সিটি। আড়াল থেকে  বের হতেই এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘আমি তোমার একটা ছবি তুলতে পারি? ওমনি  বিশাল হাসি, সেই সঙ্গে মাথা ঝুলিয়ে বুঝিয়ে দিলেন এখনই তোলো।
ছবি তোলা শেষ হতেই ছুটে এলেন কাছে। বললেন, দেখি কেমন লাগছে আমাকে! পাশে থাকা বড় ভাই এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। বলেন, ‘তুমি জানো না, আমার এই ছোটভাই বাংলাদেশ দলের কত বড় সমর্থক। ওর জন্য এই খেলা দেখতে যেমন আমার টিকিট কিনতে হয়েছে। তেমনি আজ সকালে কাজ ফেলে ৪০ মাইল ড্রাইভ করে এখানে এসেছি। আমরা থাকি ব্রিস্টলের কাছাকাছি। এখন এখানে এসে জার্সি কেনার জন্য আমাকে পাগল করছে। নিজেতো কিনেছে এখন আমাকেও কিনতে বলছে। আমি তাকে বলেছি, যদি বাংলাদেশ  জেতে তাহলে আমিও এই সবুজ জার্সি কিনবো। একসঙ্গে সেটি পরে দু’জন বাড়ি ফিরবো।’
এবার বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফ্রাংক প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে বসলেন। খোঁজ নিতে শুরু করলেন টাইগারদের। বলেন, ‘তুমি জানো বাংলাদেশের খেলা আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি চাই বাংলাদেশ জিতে যাক। আমার প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব। আমিও স্কুলে ক্রিকেট খেলি। আমি ওর মতো অলরাউন্ডার হতে চাই।’ শুধু সাকিবেই থামলেন না, জানালেন তামিম ইকবাল ও মাশরাফিও  তার প্রিয়। ফ্রাংক বলেন, ‘আমি তামিমের ব্যাটিংটা আগেও দেখেছি। কিন্ত ও যে এখানে কেন ভালো করতে পারছে না বুঝি না। আজ ৪৮ করে কীভাবে আউট হলো (রানআউট) দেখ! আমারতো ভীষণ খারাপ লেগেছে। তবে আমি জানি সাকিব আছে মাশরাফি আছে ওরাই তোমাদের জেতাবে। মাশরাফিকে আমার ভালো লাগে। দারুণ ঠাণ্ডা মেজাজের, আবার বল হাতে ভীষণ আক্রমণাত্মকও।’
ফ্রাংকের কথার মাঝে যোগ দিলেন বড় ভাই অ্যান্ডিও। বললেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের জন্য আমাদের বাসায় এখন অনেকেই জানে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নাম। আমার মাও জানে আজ বাংলাদেশের খেলা। ভাইকে কথা দিয়েছি আজ টাইগাররা জিতলে আমিও একটি জার্সি কিনে বের হবো। তার আগে দেখি তোমাদের ক্রিকেটারদের কারো অট্রোগ্রাফ নিতে পারি কিনা!’
ম্যাচ শেষে মাঠের বাইরে যখন বাংলাদেশের দর্শকরা উল্লাসে মাতোয়ারা। সেখানে যোগ দিয়েছেন বিলেতি সেই দুই ভাইও। আমাকে দেখতেই বড় ভাই অ্যান্ডি হাত উঁচিয়ে তার কেনা জার্সিটি দেখালেন। তাদের আনন্দে দেখে বোঝা মুশকিল বাংলাদেশ নাকি ইংল্যান্ড জিতেছে! সত্যি ক্রিকেট মানুষকে এক করে, আরো একবার প্রমাণ মিললো টনটনের সমারসেট স্টেডিয়ামে। ফ্রাংক ছুটে এসে বলে গেলো, ‘দেখা হবে লর্ডসে। আমি পাকিস্তানের বিপক্ষে  বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে আসবো।  ভেবেছিলাম এই ম্যাচ হারলে বাসা থেকে লন্ডন যাওয়ার অনুমতি দেবে না। এমন জয়ের পর সেই অনুমতি এখন পাবো আশা করি।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর