বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আগে মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে ও রাখাইনে তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বুধবার এমন দাবি জানিয়েছে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর এমপিদের নিয়ে গঠিত মানবাধিকার বিষয়ক জোট আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর), দ্য এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া) ও প্রগ্রেসিভ ভয়েস। আগামী ২০-২৩শে জুন ব্যাংকক-এ ৩৪তম আসিয়ান সম্মেলনে বসতে যাচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা। এর আগ দিয়ে এই আহ্বান জানালো সংগঠনগুলো গণমাধ্যমকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা জানিয়েছে আসিয়ান। চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যের মূল্যায়ন বিষয়ক আসিয়ানের একটি প্রতিবেদন ফাঁস হয়ে যায়। তাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার কথা,
সেখানে চলমান গৃহযুদ্ধ, এমনকি রোহিঙ্গাদের নামও উল্লেখ করা হয়নি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ৭ই জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আসিয়ানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপনস অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট টিম’।
আসিয়ানের ওই প্রতিবেদনে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাতে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করা হয়েছে ‘মুসলমান’ শব্দের মাধ্যমে। এতে দাবি করা হয়, ম্যানুয়ালি কাজ করার পরিবর্তে অটোমেটিকভাবে কাজ করা হলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে ‘দুই বছরের মতো’ সময় লাগবে।
শরণার্থী প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে সেই প্রতিবেদনে শরণার্থীদের ‘সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে’ প্রত্যাবাসনের কাজে মিয়ানমারের প্রচেষ্টার প্রশংসাও করা হয়।
এপিএইচআর সদস্য ও ইন্দোনেশীয় এমপি ইভা সুন্দরি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের অত্যাচার অগ্রাহ্য করা বন্ধ করতে হবে আসিয়ানকে। পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বৈধতা দেয়াও বন্ধ করতে হবে। আমরা সবাই জানি যে, বাংলাদেশ ও অন্যত্র অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা ততদিন স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরবে না যতদিন না সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ব্যাপক আকারের রাজনৈতিক পরিবর্তন দরকার। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা, মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য যে শর্তগুলো জানিয়েছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেগুলোর একটির প্রতিও কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর ওই অভিযান ছিল জাতি নিধন। তারা সেখানে গণহত্যা চালিয়েছে। প্রগ্রেসিভ ভয়েস এডভাইসরি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিন ওমার বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে যদি তাদের পরিচালিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জবাবদিহিতার মুখোমুখি না করা হয় তাহলে এই দায়মুক্তি তাদের এসব অত্যাচার করতে আরো উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি যে অত্যাচার থেকে বাঁচতে শরণার্থীরা সেদেশ ছেড়েছিল সেখানে ফিরে গেলে তাদের ফের ওইসব অত্যাচারের শিকার হতে হবে। তাদের সেখানে ফেরত পাঠানোর মানে হবে, মৃত্যুর মাঠে ফের শিকার হতে পাঠানো।
ফোরাম-এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক জন স্যামুয়েল বলেন, আসিয়ান তাদের একটি সদস্য রাষ্ট্রে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্লজ্জভাবে চুপ রয়েছে। মিয়ানমারের জাতিগত নিধনের দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে, এখনো যদি আসিয়ান চুপ থাকে তাহলে তারা একটি ভয়াবহ বার্তা পাঠাবে যে, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না ও দায়মুক্ততার সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যাবে।