× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৫০০ বছরের ভবনে ক্রিকেটের ‘হীরার খনি’

ইংল্যান্ড থেকে

ইশতিয়াক পারভেজ, ইংল্যান্ড থেকে
২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার

‘সমারসেট ক্রিকেট মিউজিয়াম। খুব সহজেই এই জাদুঘরে প্রবেশ করা গেল না। তিন দিন ঘুরে জানা গেল শুধুমাত্র বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের দিনই খুলবে ক্রিকেটের ইতিহাসের এই ‘হীরার খনি’। হ্যাঁ, জাদুঘরের কিউরেটর ৬৫ বছর বয়সী ডেভিড উডের গর্ব দেখে এটিকে মনে হতে পারে ক্রিকেটের হীরের খনিই। শুরুতেই তার এমন গর্বের কারণটি জানালেন এইভাবে- ‘তুমি কি জানো! এটি ৫০০ বছরের পুরানো ভবন? হ্যা, তুমি এমনি একটি ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছো এখন। তোমাকে স্বাগত।’ তবে এখানে প্রবেশ করেই আপনি চমকে উঠতে পারেন। কারণ ঢুকেই এক পাশে দেখবেন বড় একটি কাচের বাক্সে রাখা বেশ কয়েকটি হাড়! ভাবতে পারেন কোনো ক্রিকেটারের হাড় নয়তো! না না, ভুলটি ভাঙিয়ে দিলেন উড। তিনি জানালেন, আসলে এই ভবনটি জাদুঘর হিসেবে তৈরি করার সময় কিছু পশুর হাড় পাওয়া গিয়েছিল শতশত বছর আগে।
তা জায়গা করে নিয়েছে এই ক্রিকেট মিউজিয়ামে। তাহলে এখানে ক্রিকেটের সবচেয়ে মূল্যবান সংগ্রহ কী! প্রশ্ন শুনেই কিউরেটর উড এমনভাবে তাকালেন যেন বলতে চাইলেন কী নেই এখানে? হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন এক জোড়া জুতার সামনে আর বলেন, ‘জানো এই জুতার মাপ কত? ১৫ সাইজ! কার বলতে পার? জোয়েল গার্নারের। আমি জানি না ক্রিকেট ইতিহাসে এত বড় পা অন্য কারো আছে কিনা। তবে সমারসেট ক্রিকেট ক্লাবে খেলা কোনো ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় মাপের জুতা এটি তাতে কোন ভুল নেই।’
জোয়েল গার্নার ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত ‘বিগ বার্ড’ নামে। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার ক্যারিবীয় পেসার কতটা দীর্ঘকায় তার প্রমাণ মিলবে এই জাদুঘরেই তার ১৫ সাইজের জুতা দেখে। কাচের বাক্সে জুতাজোড়া রাখা গার্নারের একটি বড় ছবির সঙ্গে। তবে সেই গার্নার আর আগের মতো নেই। তিনি টনটনে এসেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখতে। আসবেন না কেন দীর্ঘ দিন উইন্ডিজের আগুনে এই পেসার খেলেছেন সমারসেট কাউন্টি ক্লাবের হয়ে। সেই মাঠে তার দল ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলছে তিনি তো আসবেনই। তার সঙ্গে দেখা হতেই ছুটে গিয়েছিলাম। তবে টিভি ব্রডকাষ্টার ও আইসিসির কড়াকড়ির কারণে হেসেই বললেন, ‘দুঃখিত, কথা বলতে পারবো না। নিয়ম আছে।’ তবে একটা তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো জুতার সাইজের দিক থেকে চাইলে বাংলাদেশ মোস্তাফিজুর রহমানের বুটটা যাদু ঘরে রাখতে রাখতে পারে। কারণ দেশের এই তরুণ পেসার পড়েন ১২ সাইজের বুট। এ নিয়েতো অনেক গল্পও আমাদের জানা আছে।
বাংলাদেশ থেকে আসা সংবাদকর্মী জানার পর আরো আগ্রহ বেড়ে গেল কিউরেটর উডের। ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও করারও অনুমতি দিয়ে দিলেন খুশিতে। জানিয়ে রাখা ভালো এই জাদুঘরে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা ও ভিডিও করা নিষেধ। যাই হোক তিনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন সমারসেটের ক্রিকেটের ইতিহাস। জানালেন এখানে শুধু পুরুষদেরই নয়, নারী ক্রিকেটেরও জাগরন ঘটেছে। বলেন, ‘তুমি খোঁজ নিয়ে জানতে পার আমাদের জাদুঘর গোটা ইংল্যান্ডের অন্যতম সমৃদ্ধ।’ বলবেনা কেন! এখানেই খেলেছেন আরেক ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডস। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের নামে সমারসেট ক্রিকেট মাঠের একটি গেটও আছে। জাদুঘরে রয়েছে তার বিশাল এক ছবি।
কিউরেটর জানালেন, ও দেখালেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৭ সময়টাকে বলা হয় সমারসেটের ‘গ্লোরি ইয়ার্স।’ ওই সময়টায় তারা জিতেছে দুটি ওয়ানডে কাপ, দুটি বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ, একটি ন্যাশনাল লীগ শিরোপা। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ এই ক্লাব কখনো জেতেনি। তবে এটি কাউন্টি ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। আপনাদের আগেই জানিয়েছি এই সমারসেট কাউন্টি ক্লাব যাত্রা শুরু করে ১৮৭৫ সালে। তবে এই জাদুঘরে শুধু সমারসেটেরই নয়, বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে আনা ক্রিকেটের নানা ঐতিহাসিক রসদও। এখানে আরো একটি নিদর্শন হলো প্রেস মেশিন! কিউরেটর জানালেন এটাও ক্রিকেটের কালের সাক্ষী। একসময় স্কোরকার্ড ছাপা হতো মাঠেই। সেই কাজটি হতো এই ৮০ বছর আগের প্রেস মেশিনে। এছাড়াও এখানে আছে সমারেসেটে খেলতে আসা বিভিন্ন ক্রিকেট দলের ব্যাট, প্যাড, বলও। যেগুলোর প্রতিটিতেই আছে ম্যাচে খেলা দুই দলের ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ। তেমনি একটি ব্যাটে ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের আরেক রাজা স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অটোগ্রাফ। ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ড সফরে অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর রয়েছে ওই ব্যাটে। সেই সফরে ৫ টেস্টে ৯৪.৭৫ গড়ে ৭৫৮ রান করেছিলেন ব্রাডম্যান। এছাড়াও এখানে শত বছরের পুরোনো থেকে আধুনিক যুগের অনেক ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট, ক্যাপ, হ্যাট, স্টাম্পস, বুট ও পোশাক রাখা আছে সাজিয়ে। আর দোতলায় একপাশে আছে মেয়েদের ক্রিকেটের অনেক স্মারক। বলার অপেক্ষা রাখেনা ৫০০’ বছরের পুরানো ভবনটি সত্যি হীরার খনি।
ভবনটি দেখে বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। ছাদের উপর দুই পাশে আছে ক্রুশ। লাল ইট আর পাথরগুলো কালো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আগুনে পুড়েছিল কোনো এক সময়। এক কথায় ৫০০ বছরের পুরানো এই ভবন মানুষের গৃহ নির্মাণে আধুনিকতার বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ডের টনটনে। এখানে ২শ বা ৩শ বছরের পুরনো ভবনের দেখা মেলে অহরহ। যা দেখলে এখনো মনে হবে কিছুদিন আগেই তৈরি হয়েছে। তবে ৫০০ বছরের পুরানো ভবনের খুব একটা দেখা মেলে না। যাই হোক এই ভবন আর প্রাসাদের গল্প নয় আরেক দিন হবে। ইংলিশদের বলা হয় ঐতিহ্যের ধারক, কথাটি চোখে না দেখলে ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। পুরানো আর হারানোকে তারা ধরে রাখে সযতনে। এর মাধ্যমেই তারা বেঁচে থাকতে চায় হাজার হাজার বছর। প্রমাণ করতে চায় সেই শুরু থেকেই কতটা সভ্য ছিল তারা। এর অন্যতম প্রমাণ গোটা ইংল্যান্ড জুড়ে গড়ে ওঠা শত শত জাদুঘর। সেখানে কী নেই! সেই জাদুঘর থেকে বের হতে হতে বিষণ্ন হলো মনটা। যদি আমাদেরও থাকতো এমন একটি। শতবছর পর কেউ এসে খুঁজে পেতো মোস্তাফিজের ১২ সাইজের জুতা। দেখতো চোখ বড় বড় করে!
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর