নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলাজুড়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো অবাধে গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ওষুধের ফার্মেসি দোকান। এসব ফার্মেসিগুলোতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নকল এবং অবৈধভাবে আসা বিভিন্ন দেশের ওষুধে সয়লাব। অনুমোদিত ওষুধের দোকান পুরো উপজেলায় শতাধিক হলেও অবৈধ অননুমোদিত দোকানের সংখ্যা হাজারের অধিক। এসব ওষুধ বিক্রেতাদের নেই কোনো দক্ষ প্রশিক্ষণ আর বৈধ ড্রাগ লাইসেন্স। এসব দোকানিরা বিক্রি করছেন বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ওষুধ। সন্ধ্যার পর এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছে বাড়ন্ত বয়সের ছেলেরা। সহজেই ছেলেরা ঝুঁকে পড়ছে মাদকে। অনুমোদিত দোকানেও বিক্রি হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ভেজাল কোম্পানির ওষুধ।
এ কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনরা। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট ফার্মেসির মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এক মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলে ধ্বংস করার জন্য নির্দেশ দিলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় বৈধভাবে ওষুধ প্রশাসনের লাইসেন্স এবং নিবন্ধিত ফার্মেসি রয়েছে মাত্র ১৩৫টি। অপরদিকে অনুমতি ও প্রশিক্ষণ ছাড়া অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে হাজারের অধিক ফার্মেসির দোকান। এসব দোকানে জীবন রক্ষার নামে বিক্রি হচ্ছে নকল, অনুমোদনহীন কোম্পানির ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ফার্মেসিতে যে তাপমাত্রায় ওষুধ রাখার কথা, সেই তাপমাত্রায় রাখা হচ্ছে না। ফলে ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রমরমা বাণিজ্য করছে। এই ওষুধ সেবনে বিপুল সংখ্যক রোগী নিরাময়ের বদলে স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার শিকার হচ্ছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব ওষুধ অসুস্থ রোগীকে সুস্থতার বদলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এ ধরনের ওষুধ বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের তেমন কোনো জোরালো উদ্যোগ নেই রূপগঞ্জ উপজেলায়। এতে রমরমা হয়ে উঠেছে অবৈধ এসব ওষুধের ফার্মেসিগুলো। এসব ওষুধ ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা। অনুমোদনহীন ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের এসব ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব ওষুধ খেয়ে কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গতা, লিভার, মস্তিষ্কের জটিল রোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে অহরহ। এলোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক ও হারবাল সব ওষুধেও মিলছে ভেজাল। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার এসব অবৈধ ফার্মেসিতে এ ধরনের ওষুধ বিক্রয় করে আসছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ভুলতা তাঁতবাজার এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসির দোকানদার বলেন, আমাদের কি দোষ। বিভিন্ন ডাক্তাররা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধের নাম লিখে দেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরা দোকানে এসব ওষুধ বিক্রি করছি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রূপগঞ্জ শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান কামাল হোসেন বলেন, আমাদের হিসেবে পুরো উপজেলাজুড়ে ওষুধ প্রশাসনের লাইসেন্স এবং নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট রয়েছে মাত্র ১৩৫টি ফার্মেসির। রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় অনুমোদনহীন ও অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ১ হাজারের বেশি ফার্মেসি। আমরা আমাদের সমিতির মাধ্যমে এসব অবৈধ ফার্মেসির মালিকদের বহুবার বলেছি অনুমতি নিয়ে ফার্মেসির ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত না করে অবাধে নকল, অনুমোদনহীন কোম্পানির ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ বিদেশি ওষুধ বিক্রি করে আসছে। এসব ফার্মেসির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওষুধ প্রশাসনের বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা চাই, প্রশাসন যেন অতিদ্রুত এসব ফার্মেসির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, ইতিমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট ফার্মেসির মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এক মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলে ধ্বংস করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা প্রশাসনিকভাবে যে সব ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে সেসব ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছি। তাছাড়া, এসব অভিযানে ড্রাগ্স ইন্সপেক্টর ছাড়া হয় না। আমাদের উপজেলায় ড্রাগস ইন্সপেক্টরের সংখ্যা কম থাকায় আমরা জেলায় ড্রাগস ইন্সপেক্টরের জন্য আবেদন করেছি। অনুমোদিত ফার্মেসি ও ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।