কাগজ আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ৬টি সংগঠন। তারা বলেছে, ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে কাগজ আমদানির সুযোগ দিলে, বন্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে, বাজার স্থিতিশীল হবে, রাজস্ব বাড়বে এবং মুদ্রণ শিল্প বিকশিত হবে।
গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের পল্টন টাওয়ারে অবস্থিত ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ওই দাবি জানানো হয়। দেশের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিশ বোর্ড ও ফোল্ডিং বক্স বোর্ড আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি জানায় সংগঠনগুলো। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পেপার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ পঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল এবং মেট্রোপলিটন প্রেস ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান উজ্জ্বল। সংবাদ সম্মেলনে শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, প্লাস্টিক কাঁচামাল সমগ্রী অপব্যবহার রোধকল্পে দুই বছর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করে। ফলে এ খাত থেকে বর্তমান সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে।
কাগজ ও কাগজ বোর্ড খাতে অনিয়ম রোধ করে বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ শুল্ক করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, পাল্প তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি। পেপার মিলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাল্প। মুদ্রণ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় কাগজ, বোর্ড, আর্ট কার্ড, সাফার কালি, ঘাম ইত্যাদি। এমতাবস্থায় অন্যান্য দেশীয় শিল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যে হার বিদ্যমান আছে, মুদ্রণ শিল্পের অগ্রগতির জন্য সেই হারে শুল্ক পরিশোধ পূর্বক কাগজ আমদানির সুযোগ দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমদানি করা পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে; যার ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ খাতে ব্যবসায়ীরা অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। আমদানি করা পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে অবৈধ ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, রপ্তানিকারকদের সুবিধা অব্যাহত রেখে, ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বিদেশি কাগজ আমদানির সুযোগ দিলে, বন্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে, বাজার স্থিতিশীল হবে, রাজস্ব বাড়বে এবং মুদ্রণ শিল্প বিকশিত হবে। তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, বোর্ডের ৩৭ কোটি পাঠ্যপুস্তকের যে কাভার পেজ তৈরি করে মুদ্রণ শিল্প সমিতি, সেটাও বৈধভাবে আমদানি হয় না। দেশে নোট বইসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০ কোটি বই ছাপানো হয়; সিরাপ ওষুধের কাভারের কাগজ, বার্ষিক দিনপঞ্জির কাগজও দেশে তৈরি হয় না। এসব কাগজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।