টুর্নামেন্টের শুরুতে ডার্ক হর্স বলা হচ্ছিল আফগানিস্তানকে। তবে টুর্নামেন্টে মোটেই নিজেদের সুনাম অনুযায়ী খেলতে পারেনি দলটি। প্রতিটি ম্যাচেই হেরেছে তারা। তাদের সেরা তারকা রশিদ খানের স্পিন গোটা টুর্নামেন্টেই ভোঁতা দেখিয়েছে। যে সুযোগ নিয়ে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৩৯৬ রানের স্কোর গড়েছিল ইংল্যান্ড। শক্তিমত্তার বিচারে মনে করা হচ্ছিল ভারতও হয়তো ইংল্যান্ডের পথেই হাঁটবে! সেটা হলো কই। আফগান স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে সেখানে ভারত করেছে মাত্র ২২৪ রান। বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করে ভারত এর চেয়ে কম রান সর্বশেষ তুলেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে, বাংলাদেশের বিপক্ষে।
পোর্ট অব স্পেনের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল পাঁচ উইকেটে।
পাঁচটি ম্যাচই হেরে ১০ দলের মেগা টুর্নামেন্টে ‘লাস্ট বয়’ আফগানরা। সেখান থেকে ভারতের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধ বিধস্ত দেশটি। এমন ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। আর স্পিন খেলতে পারে বলে সুনাম আছে যাদের, সেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপই আফগান স্পিনের সামনে কী অসহায় দেখাচ্ছিল! চার স্পিনার মুজিব উর রেহমান, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও রহমত শাহর ৩৪ ওভার থেকে ভারত তুলতে পেরেছে মাত্র ১১৯ রান! একের পর এক ডট বল খেলে চাপ তৈরি করেছে নিজেদের ওপর। শুধু যে রান আটকেছে তাই নয়, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাও ভেঙেছেন স্পিনাররাই। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই উইকেট দিয়ে এসেছেন স্পিনারদের। আফগান স্পিনারদের সামনে কতটা অসহায় দেখিয়েছে ভারতকে, তার আদর্শ উদাহরণ মহেন্দ্র সিং ধোনির ইনিংস। ৫২ বলে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারা ধোনি রানের জন্য রীতিমত হাঁসফাঁস করতে করতে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন রশিদ খানকে। শুধু ধোনি কেন, কোহলি বাদে সব ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য হাঁসহাঁফ করেছেন। লোকেশ রাহুল করেছেন ৫৩ বলে ৩০, বিজয় শংকর ৪১ বলে ২৯। কেদার যাদব ৫২ করেছেন বটে, তবে প্রতিটি রান তুলতে ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। রশিদ খানের করা ৪৭তম ওভারে তো এক রানও বের করতে পারেননি কেদার। পুরো ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৬ রানের খরচায় নিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪০ করা রোহিত শর্মার উইকেট নিয়েছেন মুজিব উর রহমান। মুজিবের তৈরি করা চাপ মাঝের ওভারগুলোতে ধরে রেখেছেন দলের অন্যতম সিনিয়র বোলার নবী। ৯ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৩ রান, তুলে নিয়েছেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলির মহামূল্যবান উইকেট দুটি। বাকিরা হাত খুলতে না পারলেও কোহলি ঠিকই খেলেছেন নিজের মতো। ৬৩ বলে ৬৭ করা কোহলিকে ফিরিয়ে আফগানদের সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়েছেন নবীই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেদম মার খেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা রশিদ গতকাল ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি, তবে ১০ ওভারে রানও দিয়েছেন মাত্র ৩৮। তিন মূল স্পিনারের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই কি না, অনিয়মিত স্পিনার রহমত শাহও দারুণ বল করেছেন। লেগ স্পিনে ফিরিয়েছেন বিজয় শংকরকে, ৫ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২২ রান।