২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভ্যাটের আওতায় আসবে। এর ফলে ভোক্তারা বাড়তি চাপে পড়বে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য ভ্যাটের আওতার বাইরে রেখে দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব এ কথা জানায়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। এ সময় ক্যাবের সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ২০১২ সালের ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেট পেশ হলেও ইতিমধ্যে বাজারে দুধ, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। একক ১৫ শতাংশ কর হার ছাড়াও ৫, ৭.৫ এবং ১০ শতাংশ হারে করারোপের বিধান করা হয়েছে। এতে ক্রেতা-ভোক্তা বাড়তি কর পরিশোধে বাধ্য হবে। এ ছাড়া ভ্যাটের পরিধি বাড়ানোর কারণে বেশ কিছু পণ্য, যেমন নিত্য ব্যবহার্য ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে পণ্যমূল্য বাড়বে। ভোক্তা স্বার্থে পণ্যের দাম বাড়ে এমন ভ্যাট আরোপ করবে না সরকার বলে প্রত্যাশা করেন ক্যাব সভাপতি।
গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশের আমদানির ওপর আরোপিত (২০১৭) শুল্ক হার গড়ে ২৫.৬৪ শতাংশ, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর গড় আমদানি শুল্কহার ছিল ৪.৭৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এই হার ছিল ১২.১৯ শতাংশ।
ক্যাব সভাপতি বলেন, প্রত্যাশা ছিল বাজেটে শুল্কনীতি পর্যালোচনা করে ক্রমান্বয়ে আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং গুঁড়া দুধ ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গুঁড়া দুধের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব যথাযথ নয়। আশা করব সংসদে আলোচনার পর এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হবে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে অর্জিত আয়ের ওপর আয়কর দ্বিগুণ করে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত, বয়স্ক, মধ্যবিত্ত, গৃহহীনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষতির মধ্যে পড়বে। তাই বর্ধিত উৎসে কর কমানোর দাবি জানানো হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রতি বছরই সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহে বিলম্ব হয়। এতে কৃষক সরকারের সুফল থেকে বঞ্চিত হন, লাভবান হন মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়িক শ্রেণি। অনেক সময় রাজনীতিকরা এ সুবিধা লুটে নেন। এ অবস্থার উত্তরণে প্রস্তাবিত বাজেটে মিলারদের সম্পৃক্ত করে ‘কন্ট্রাক্ট গোয়িং’ পদ্ধতিতে ধান-চালের ক্রয়ের দাবি জানায় ক্যাব। ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমে সমন্বয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ১২-১৫টি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং সেবা চিহ্নিত করে সেসব পণ্য ও সেবার মূল্য সহনীয় এবং স্থিতিশীল রাখার জন্য ‘ভোক্তা বিষয়ক বিভাগ’ নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিভাগ অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ক্যাব।